ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে অভিযান চলছে

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে শুরু হয়েছে অভিযান। রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত পাওয়া খবর, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, চলমান টাস্কফোর্সের এ অভিযানে থাকবে জিরো টলারেন্স নীতি।

এই টাস্কফোর্স টিম ট্রেন ছাড়ার সময় প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়ে ছাদে ভ্রমণ রোধে কাজ করছে। এরইমধ্যে স্টেশনগুলোতে মাইকিং শুরু হয়েছে। এছাড়া স্টেশনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। বড় স্টেশনগুলোতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে আইনটি ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগের দাবিও তাদের।

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ এরকম ১২টি স্টেশন চিহ্নিত করেছে। স্টেশনগুলো হলো- জয়দেবপুর, বঙ্গবন্ধু পশ্চিম, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, সান্তাহার পার্বতীপুর, লালমনিরাহাট, বোনারপাড়া, বগুড়া পঞ্চগড়, রংপুর ও দিনাজপুর। এসব স্টেশনে চলছে বিশেষ নজরদারি।

এদিকে, শুধু যে টিকেট না পেয়ে ছাদে ওঠেন অনেক যাত্রী তা নয়, বিনা পয়সায় যাতায়াতের উদ্দেশেও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নেন। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে।

এ ব্যাপারে কমলাপুর স্টেশনে আরএনবির একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, কোরবানির ঈদের পর থেকেই ট্রেনের ছাদে উঠে যেন কেউ ভ্রমণ করতে না পারে সেদিকে নজর বাড়ানো হয়েছে। তবে স্টেশনে উঠতে না দিলেও স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর ট্রেনের গতি যখন কম থাকে তখন অনেক যাত্রী চলন্ত ট্রেনেই ছাদে উঠে পড়ছে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে এবার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে কেউই কোনো ট্রেনের ছাদে উঠতে পারবেন না।

রেল ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, রেলমন্ত্রী চীন সফরে যাওয়ার আগে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এরপর সারাদেশের সব স্টেশন ম্যানেজারের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে যাতে ট্রেনের ছাদে কেউ ভ্রমন করতে না পারে। এরপর রেল কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে যায়।

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ, অনিরাপদ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ছাদে ভ্রমণের কারণে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে ভ্রমণকারীর মৃত্যু হতে পারে। ছাদে ভ্রমণের কারণে ট্রেন বিলম্বিত হয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বিঘ্নিত হয় এবং সরকারি মূল্যবান সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাদে ভ্রমণকারী ও ভ্রমণে উৎসাহ সহযোগিতা প্রদানকারীও সমান অপরাধী।

ট্রেনের ছাদে করে ভ্রমন করা রেলওয়ের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বিপজ্জনক বা বেপরোয়া ভাবে ট্রেনের ছাদে করে ভ্রমন করলে তবে ওই ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট তথ্য বলছে, চলিত বছর ট্রেনজনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮০টি। এতে প্রাণ গেছে ৮২ জনের। এর মধ্যে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন দুই জন।

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (ভোর ৫:৫৭)
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com