ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম

 

আমদানি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। সবধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি উঠেছে ৮০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম। এদিকে বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আজ সোমবার জরুরি বৈঠকে বসছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, রবিবার দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও আমদানি করাটা ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাস্তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এর দাম আরও বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। বর্তমানে কৃষকের কাছে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলা যাবে। অর্থাৎ দেশি পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ভারতে বৃষ্টি ও পূজার ছুটির অজুহাতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করে দাম বাড়িয়েছেন।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এর ফলে দাম বেড়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতায় অনেকে আমদানির এলসি খোলেনি। তবে শুল্ক প্রত্যাহার হলে আমদানি বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত শনিবার বন্দর দিয়ে এক দিনেই ৩৪টি ট্রাকে ৯২৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গতকাল রবিবার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তারপরও দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত। দুদিন আগেও বন্দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা বেড়ে ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতিদিন কেজিপ্রতি ২/৩ টাকা করে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে, তবে আগে শুধু ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে তার সঙ্গে সাউথের বেলোরি জাতের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বন্দরে সাউথের বেলোরি জাতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারিতে (ট্রাকসেল) বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা কেজি দরে আর ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেঁয়াজের আমদানি আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। বন্দর দিয়ে শনিবার এক দিনেই ৩৪টি ট্রাকে ৯২৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যেখানে বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে ২০টি ট্রাকে ৫০৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। আজো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল তাই দ্রুত খালাস করে দেশের বাজার ধরতে পারে এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এদিকে আগামী পাঁচ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। রবিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একটি কর্মশালা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, গ্রীষ্মকালীন ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসার পরপরই আগামী ৫ থেকে ২০ দিন পর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। পেঁয়াজ হারভেস্ট করেছে সেই এপ্রিল মাসে। এতদিন পর্যন্ত পেঁয়াজ থাকে না। তাই পেঁয়াজ চাষিরা সব বিক্রি করে দেন। পেঁয়াজ পচনশীল ও মজুত রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে দাম বেড়ে যায়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ১:২০)
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com