জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। ইউরোপজুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ, যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড। তীব্র তাপপ্রবাহে ইউরোপে এ পর্যন্ত হাজারখানেকেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়েও বইছে অসহনীয় তাপমাত্রা। রাজশাহী, পাবনাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এখন মৃদু তাপদাহ চলছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত গরমে বাড়ছে নানা ধরনের রোগবালাই। এর মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে চর্মরোগ ও পেটের অসুখ নিয়ে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। আছে ডেঙ্গুরোগীও।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরমকালে সব ধরনের রোগবালাই বাড়ে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, গরমে মানুষের অসচেতন জীবনযাত্রা বাড়ে। কোমল পানীয়র অধিক ব্যবহার, রাস্তার ধারের পানীয় পান কিংবা খালি গায়ে থাকায় মশার কামড়ে অনেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এছাড়াও গরমে ঘামাচি ও ছত্রাকজনিত চর্মরোগ বেশি হতে দেখা যায়। ঘাম ও ভেজা শরীর ছত্রাক জন্মানোর জন্য উপযোগী। ছত্রাকজনিত চর্মরোগ প্রধানত তিনটি- দাউদ, ছুলি ও ক্যানডিডিয়াসিস। এ ছত্রাক প্রজাতির সবই ত্বকের বাইরের অংশে সংক্রমণ হয়।
সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ) ঘুরে দেখা যায়, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে রোগীদের ভিড়। ঢামেক সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিক হারে বেড়েছে চর্মরোগীর সংখ্যা। অন্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গরমকালে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে চর্মরোগী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমইউয়ের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ না বাঁচলে শুধু ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ নেই, এটি আমাদের মনে রাখতে হবে। ঘামাচি থেকে শুরু করে সংক্রামক চর্মরোগী এ গরমের সময় বাড়ছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ চর্মরোগী বাড়ছে। কেউ একা বাঁচতে পারবে না। একা ভালো থাকতে পারবে না। এজন্য রাষ্ট্র ও সমাজের হিতে কাজ করতে হবে।
ঢামেকের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার লিটন দেবনাথ বলেন, চর্মরোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গরম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়েও এ রোগে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চর্মরোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।
গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে মানুষের শরীর থেকে রক্তের জলীয় অংশ বিশেষত ফ্লুয়িড এবং খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়। এতে মানুষের ভলিউম কমে যায় এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে আসে। পরবর্তীসময়ে তা মানুষের শরীরে উপদ্রব সৃষ্টি করে লাল ইচিং বা লাল হয়ে, যেটাকে আমরা ঘামাচি হিসেবে জানি। এছাড়াও আরও অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়া, পাঙ্গাস ও সংক্রামকসহ নানা ধরনের চর্মরোগ হতে দেখি। যার কারণে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে খারাপ বা বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে আসে। এটি যদি শরীরে অনেকক্ষণ চামড়ার ওপর জমে থাকে তাহলে চামড়ায় নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এজন্য গরমে ঠান্ডা স্থানে থাকতে পারলে ভালো। অন্যথায় যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে এরকম ভেন্টিলেশনযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করতে হবে। বেশি ঘেমে গেলে আমাদের সাবান অথবা সেম্পু দিয়ে গোসল করে শরীরকে শুষ্ক রাখতে হবে। তা না হলে ব্যাকটেরিয়া বা পাঙ্গাস জাতীয় চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া বা পাঙ্গাসের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ওষুধের এখন কার্যকারিতা কমছে। এজন্য গরমকালে চর্মরোগী প্রতিরোধ করা নিরাময় থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
গরমে চর্মরোগ থেকে বাঁচতে যেসব বিষয় লক্ষ্যণীয়:
১. বেশি বেশি গোসল করতে হবে।
২. শরীর পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।
৩. ভেজা শরীরে কাপড় পরা যাবে না।
৪. ঘাম ও ময়লাযুক্ত শরীরে বিশেষত সিন্থেটিক ধরনের কাপড় পরা যাবে না।
৫. সুতি ও পাতলা কাপড় পরতে হবে, যেন সহজে ঘাম ও ময়লা কাপড় শোষণ করে নিতে পারে।