ঘরে বানানো রুটি স্কুলে বিক্রি করে আইফোন কিনল বিয়াঙ্কা

মাত্র ৬ সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ জমিয়ে তা দিয়ে আইফোন ১৪ কিনেছে দুবাইয়ের ১২ বছর বয়সী কিশোরী বিয়াঙ্কা জেমি ওয়ারিয়াভা; কেবল ঘরে বানানো রুটি বিক্রি করেই এই কাজ সে সম্ভব করেছে।

বিয়াঙ্কার বাবা ও মা ফিলিপাইন থেকে এসেছেন। দুবাইয়ে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের শেফ এই দম্পতি বেকিংয়েও (রুটি-কেক-কুকিজ তৈরি করা) খুব দক্ষ। এই শহরে নিজেদের একটি পিজ্জার দোকানও আছে তাদের।

গত বছর সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৪ বাজারে আসার পর এই সিরিজের একটি ফোন কিনে দিতে বাবা-মার কাছে বায়না ধরে দুবাইয়ের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে পড়া বিয়াঙ্কা। কিন্তু ৩ হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫হাজার ৮০০ টাকা) ব্যয় করে মেয়েকে আইফোন ১৪ কিনে দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না মধ্যবিত্ত মা-বাবার। বিয়াঙ্কাও তাদের অপারগতার ব্যাপারটি মেনে নিয়েছিল।

তবে গত জানুয়ারির মাসে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যায় বিয়াঙ্কার সামনে। ওই মাসের মাঝামাঝি কোনো এক দিন বিয়াঙ্কার মা জেমিনি ওয়ারিয়াভা মেয়ের টিফিনবক্সে কয়েকটি ঘরে বানানো রুটি দিয়েছিলেন। টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুদের সেসব রুটি ভাগ করে দেয় বিয়াঙ্কা এবং তারা খুবই পছন্দ করে।

‘আমার মা এমনিতেই খুব চমৎকার রুটি-কেক-কুকিজ তৈরি করতে পারেন। আমার জন্য যখন কোনো কিছু তৈরি করেন, স্বাভাবিকভাবে সেগুলো আরও বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। প্রথমদিন যখন আমি আমার বন্ধুদের রুটি খাওয়ালাম— তারা সেগুলোর ব্যাপক প্রশংসা করেছিল এবং বলেছিল, পরের দিনও যেন আমি তাদের জন্য রুটি নিয়ে যাই,’ দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসকে বলে বিয়াঙ্কা।

এর মধ্যেই তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দেয়— বাড়িতে বানানো এসব রুটি সে বিনে পয়সায় না দিয়ে নগদ অর্থে স্কুলেই বিক্রি করতে পারে। এই পরামর্শ শোনার পরই বিয়াঙ্কার মনে হয়— এর মাধ্যমে চাইলে আইফোন ১৪ কেনার অর্থ সে জোগাড় করতে পারে নিজেই।

খালিজ টাইমসকে বিয়াঙ্কা জানায়, মা-বাবাকে এই নতুন আইডিয়া জানানোর পর তারা সানন্দে তাকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়ে যান। বিয়াঙ্কার মা জেমিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘ছোটো থেকেই তার বেকিংয়ের দিকে আগ্রহ ছিল। স্কুলের পড়াশোনার পর সে নিয়মিত পিজা পার্লারে আমাদেরকে সহযোগিতা করে। ওই কাজের ফাঁকেই আমি আর বিয়াঙ্কা (স্কুলের জন্য) রুটি তৈরি করতাম।’

প্রথমদিন অবশ্য বিয়াঙ্কা মাত্র ৪টি রুটি বিক্রি করতে পেরেছিল। কিন্তু সময় যত যেতে থাকে, তার রুটির জনপ্রিয়তাও তত বাড়তে থাকে এবং এক সময় প্রতিদিন গড়ে ৬০টি করে রুটি বিক্রি হতে থাকে এবং সাধারণ রুটির পাশাপাশি প্লেইন সফট রোল, ওরিও, উবে উইথ চিজ, তুর্কি সালামি উইথ চিজ অ্যান্ড চিকেন প্রভৃতি রুটির চাহিদাও বাড়তে থাকে ব্যাপকভাবে।

রুটি বিক্রি শুরু করার পর মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে ৩ হাজার দিরহাম জমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় বিয়াঙ্কা। এই অর্থ দিয়ে আইফোন ১৪ কেনে সে।

‘আমি যখন ফোন কিনলাম, কয়েকজন সহপাঠি আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়েছিল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করত যে, আমার মা-বাবা কত গরিব— যে নিজের মেয়েকে তারা আইফোন কিনে দিতে পারে না; কিন্তু আমি তাদের এসব আলোচনা কখনও পাত্তা দিইনি।’

খালিজ টাইমসকে বিয়াঙ্কা বলে, পড়াশোনা শেষ করে গতাগতিক চাকরি করা কোনো ইচ্ছে তার নেই; বরং দুবাই শহরে নিজের একটি বেকারি ও কফিশপ খুলতে চায় সে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (রাত ২:২৪)
  • ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com