উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে ২০১৪ সালে ৪৩ জন ছাত্রকে অপহরণ করা হয়েছিল। এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিল পুলিশ। অবশ্য শুধু পুলিশ নয়, দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও জানতেন ওই ছাত্রদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
মূলত ৪৩ জন ছাত্রকে অপহরণের ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সমান্তরাল তদন্ত চালানোর জন্য একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরইমধ্যে মেক্সিকোর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে নতুন করে কাজ শুরু করতে হয়েছে।অবশেষে মঙ্গলবার তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী, নৌসেনা এবং পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা জানতেন ওই ছাত্রদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা তা জানাননি। ছাত্রদের উদ্ধারের ব্যবস্থাও করেননি।
রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ওই কর্মকর্তারা সরাসরি ড্রাগ মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত অথবা তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। সে কারণেই তারা ওই ছাত্রদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি।
বস্তুত, ওই ছাত্রদের অপহরণের পেছনেও পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর হাত থাকতে পারে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এর সঙ্গে জড়িত বলে জানানো হয়েছে। ৪৩ জনের মধ্যে ১৭ জন ছাত্র কোথায় আছে, সেই রিপোর্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল বলেও জানানো হয়েছে।
বস্তুত, ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনী এবং নৌসেনা বেশ কয়েকটি ভুয়া অপারেশন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তিদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই ব্যক্তিদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে ভুল জবানবন্দি আদায় করার চেষ্টা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
মঙ্গলবার এই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গেছে মেক্সিকোতে। এর আগেও সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে ড্রাগ মাফিয়াদের যোগাযোগের অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে। কিন্তু এত স্পষ্ট করে লিখিত আকারে এমন অভিয়োগ বিরল।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোর ইগুয়ালা শহর থেকে ৪৩ জন ছাত্র নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে জানা যায়, ড্রাগ মাফিয়ারা তাদের অপহরণ করেছে। বহু তদন্তের পরেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। অনেক পরে তিনজন ছাত্রের দেহাংশ মেলে।
বাকি ছাত্রদেরও মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা রয়েছে।