টানা প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা নিয়ে রুশ এই আগ্রাসন মোকিবলা করছে ইউক্রেন। এছাড়া ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেও দেশের সংকটময় এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
আর এমন এক সময়েই মালদ্বীপে পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউক্রেনের এক এমপির বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তও শুরু হয়েছে এবং গুরুতর এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে হতে পারে তিন বছরের কারাদণ্ড।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মালদ্বীপে ছুটি কাটিয়ে ইউক্রেনীয় এক সংসদ সদস্য আইন ভঙ্গ করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির কর্তৃপক্ষ। মূলত ছুটি কাটানোর জন্য ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এছাড়া বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্যদলে নিয়োগ দেওয়া যায় এমন বয়সের পুরুষদের দেশ ছাড়ার জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে ইউক্রেনে।
বিবিসি বলছে, দেশকে যুদ্ধের মধ্যে রেখে পরিবার নিয়ে মালদ্বীপ ভ্রমণ করা ইউক্রেনীয় ওই এমপির নাম ইউরি অ্যারিস্টভ। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ইউরি অ্যারিস্টভ দেশ ছাড়ার আগে কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন কিনা তা মূল্যায়ন করতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ইউক্রেনীয় এই এমপির তিন বছরের জেল হতে পারে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশ ছেড়ে যাওয়ার আবেদন করার সময় আরিস্টভ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে স্টেট ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এসবিআই) এবং ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে।
এসবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা গেছে- ইউরি অ্যারিস্টভ চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে মালদ্বীপের প্রাইভেট আইল্যান্ড ইথাফুশিতে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে ছিলেন। কিন্তু নিজের দেশে এসময় তিনি অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থাকার কথা জানিয়েছিলেন।
বিবিসি বলছে, চলতি বছরের ৫ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন ইউরি অ্যারিস্টভ। প্রথমে তিনি পোল্যান্ডে তিন দিনের ব্যবসায়িক সফরে রওনা হন। পরে ইউক্রেনীয় মিডিয়া মালদ্বীপে তার খোঁজ পায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার এক বক্তৃতায় সরকারি কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ‘ক্রোধ’ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, ‘যখন আপনি ক্রমাগত দেখেন এবং অনুভব করেন যে, ইউক্রেনের জন্য আমাদের যোদ্ধাদের অর্জিত নৈতিক শক্তি, স্বাধীনতা রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য যখন আমাদের জনগণ সম্ভাব্য এবং অসম্ভব সবকিছুই করে চলেছে, তখন যেকোনও ধরনের অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতা, কোনও ‘সমুদ্র সৈকতে’ (ছুটি) বা ইউক্রেনের স্বার্থের পরিবর্তে কোনও ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা বা অর্জন অন্তত ক্ষোভের জন্ম দেয়।’
অবশ্য বিতর্ক সামনে আসার পর অ্যারিস্টভ পদত্যাগের একটি চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংসদের স্পিকার রুসলান স্টেফানচুক। ফেসবুকে তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে আলোচনা করা হবে।
বিবিসি বলছে, জেলেনস্কি তার সরকারের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করার পর চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছিলেন। এমনকি যুদ্ধের মধ্যে থাইল্যান্ড সফর করায় নিজ দলের এক এমপিকে বরখাস্তও করেছিলেন জেলেনস্কি।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেসময় ১২ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন কিংবা বরখাস্ত হন। তাদের মধ্যে একজন উপকৌঁসুলিও ছিলেন।