হেপাটাইটিস বি : মৃত্যুতে ম্যালেরিয়া-টিবিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা

বিশ্বব্যাপী যখন সংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যুর হার ক্রমাগত নিম্নমুখী, তখন হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এর উল্টো চিত্র ফুটে উঠছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস-বি জনিত নানা জটিলতায় মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা ম্যালেরিয়া এবং টিবি রোগে মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে। এ অবস্থায় এসডিজি গোল বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস-বি এবং সি ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরামর্শ তাদের।

রোববার (৩০ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন এবং হেপাটোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রমকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ২৮ জুলাইকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে শুধু সচেতনতাই নয়, পাশাপাশি লিভার রোগীদের সুলভে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়টিও ক্রমেই অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

এসময় তিনি ডিভিশনটির গত ২ বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে জানান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনে এরই মধ্যে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবলেশন, ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন এবং ইমিউনথেরাপির মতো অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা সেবা উপলব্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি লিভার সিরোসিস রোগীদের চিকিৎসায় চালু করা হয়েছে হেপাটিক ভেনাস প্রেসার মেটিয়েন্ট, অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা স্টেম সেল থেরাপি, মুজিব প্রটোকল বা প্লাজমা এক্সেচেঞ্জ, লিভার ডায়ালাইসিস বা হেমোফিলটেশন। এছাড়াও ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনের গবেষণাতেও ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, বাংলাদেশ, জাপান এবং কিউবার চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্ভাবন ‘ন্যাসভ্যাক’ নামক হেপাটাইটিস বি-এর নতুন ওষুধটির একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডিভিশনটিতে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ ট্রায়ালটি সফল হলে হেপাটাইটিস বি রোগীরা রোল এন্টিভাইরাল ওষুধ বন্ধ করে ন্যাসভ্যাকের এক কোর্স চিকিৎসা গ্রহণ করেই ভালো থাকতে পারবেন। পাশাপাশি ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটিতে ফ্যাটি লিভার এবং লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় একাধিক ভেষজ ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী ভাইরাল হেপাটাইটিস সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে ডিভিশনটি এরই মধ্যে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১ বাংলাদেশ এবং সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ওপর তার প্রশাসন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এসময় তিনি ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রোটারি মুভমেন্টের আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের একাধিক সংস্থা যদি একত্রে কাজ করে তবে দেশের উন্নয়ন হবে। ইপিআই কর্মসূচি প্রথম চালু করেছিল রোটারিরা। সেই কর্মসূচি ধরে দেশ আজ পোলিওমুক্ত। রোটারি ক্লাবসহ দেশের সব সংস্থাকে নিয়ে আমরা শুধু হেপাটাইটিস না, অনেক বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করবো। রোটারি ক্লাব বছরে এক লাখ স্ক্রিনিং করতে চায় এবং তারা এ রোগ প্রতিরোধে বছরে ১০ হাজার ভ্যাক্সিন দিতে চায়, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।

হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত একজন মানুষ যখন অন্যজনকে রক্ত দিচ্ছে, তখন যদি স্ক্রিনিং ভালোভাবে না হয় তখন এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি মনে করি হেপাটাইটিস যদি ভালো করে স্ক্রিনিং করা যায় তবে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব। ভ্যাকসিনও সবাইকে নিতে হবে। সবার অবগতির জন্য জানাই, সিরোসিস অব লিভার অথবা ফ্যাটি লিভার অথবা হেপাটাইটিসের ফলে যে রোগীগুলো প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন রোগী মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে আশি লাখ লোক হেপাটাইটিসে ভুগছে। বিশভাগ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

এসময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভসহ স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকার গৃহীত নানা কর্মসূচির বর্ণনা দেন এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাচিপের বিশ হাজার নেতা-কর্মী পাশে থাকবে বলে জানান।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সরকারের কর্মপরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা জানান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com