অর্গান ট্রান্সপ্লান্টের নামে কোটি টাকা পাশের দেশে চলে যাচ্ছে

ক্যাডাভারের (মৃতদেহ) অভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে ভুয়া কাগজপত্রে অর্গান ট্রান্সপ্লান্টের নামে প্রতিবছর দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশ চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ্) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে যারা ব্রেন ডেথ রোগী, তাদের একজন রোগী থেকে আটজন রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু ক্যাডাভারের অভাবে আমরা সেটি পারছি না।

রোববার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ আয়োজিত বাংলাদেশের ক্রিটিক্যাল কেয়ার হেলথ ওয়ার্কফোর্সের বর্তমান অবস্থা এবং এর উন্নয়নে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। দুর্ঘটনা ঘটলে তো আর আমরা চাইলেই প্রতিরোধ করতে পারছি না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কবলিত অধিকাংশই তরুণ। অনেকেই মারা যায়। এক্ষেত্রে আমরা অন্য মানুষদেরও উপকার করতে পারি। দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে যারা ব্রেন ডেথ রোগী, তারা আর ফিরে আসবে না। তাদেরকেও মানুষের কল্যাণে ক্যাডাভার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। আমরা সেটি পারছি না।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা ব্যবস্থাপনায় সারা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিরো হয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আইন তৈরি করতেন, তার কন্যা সেই পথেই হেঁটেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবার জন্য প্রত্যেক জেলায় জেলায় আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বয়সের বাধা উঠিয়ে দিয়ে জেলায় জেলায় করোনার সময়ে সারাদেশে স্থাপিত আইসিইউতে অ্যাসেথিওলজিস্ট ৮০৯ জনকে নিয়োগ দিয়ে দেশের মানুষকে রক্ষা করেছেন।

উপাচার্য বলেন, আইসিইউতে যারা থাকেন, তারা রিস্কের মধ্যে থাকেন। আমরা যারা আইসিউতে যাই, তারাও রিস্কে থাকি। তাদের রিস্ক অ্যালাউন্স দেওয়ার বিষয়টি আজকে প্রকাশিত গবেষণায় প্রস্তাব আকারে এসেছে। আইসিইউতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা দিলেও অ্যানিসথিওলজিস্টদেরও রাখতে হবে

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অনেক জায়গায় আইসিইউ আছে কিন্তু অক্সিজেন নেই। এমন যেন আর না দেখি। এমন হলে এসব হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। দেশে যেকোনো সময় মহামারি হতে পারে, যেকোনো সময় প্রবলেম হতে পারে।

উপাচার্য আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে অ্যানিসথিওলজিস্টের অভাবে গাইনোকোলজিস্ট, সার্জনরা অপারেশন করতে পারছেন না। এজন্য অ্যানিসথিওলজিস্টদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।

কর্মশালায় গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক। তার গবেষণাটিতে আটটি বিভাগের মোট ৮টি মেডিকেল কলেজ ও দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৩২টি জেলা হাসপাতাল অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালে আইসিইউ এবং এইচডিইউ স্থাপন করা জরুরি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে আইসিইউ পরিচালনা করা উচিত, এক্ষেত্রে অ্যানেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞগও অর্ন্তভুক্ত থাকবেন, আইসিইউ’র জন্য আলাদাভাবে পদ ও পদসোপান তৈরি করতে হবে ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. আশরাফি আহমেদ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com