বাগেরহাটে ভেসে গেছে কয়েক হাজার ঘের, পৌনে ২ কোটি টাকার ক্ষতি

টানা বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে জেলার কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। 

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ২৩০টি মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এতে চাষিদের ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৩৭৫টি, কচুয়ায় ৬৪০টি, শরণখোলায় ১০০টি, রামপালে ১ হাজার ৫৪০টি, মোরেলগঞ্জে ৮৫৫টি এবং মোংলায় ৭২০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮২৫ একর জমিতে থাকা ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যের বাইরেও বেশকিছু ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি মৎস্য চাষিদের।

সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের খেগড়াঘাট গ্রামের মৎস্যচাষি কবির হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে তার ডেমা বিলের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে থাকা ঘেরের চিংড়ি ও সাদা মাছ ভেসে গেছে। এতে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পানি বাড়তে থাকায় ঘেরের চারপাশে নেট জাল দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু স্রোতের তোড়ে সেই জাল ছিড়ে মাছ ভেসে গেছে।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের তালপুকুর এলাকার ঘের চাষি শেখ জুবায়ের হোসেন বলেন, জোয়ারের পানিতে তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও, বৃষ্টির পানিতে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। বেরি তলিয়ে ঘেরের মাছ সব বের হয়ে গেছে।

বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, পানিতে অনেকেরই ঘের তলিয়ে গেছে। কারও কারও ঘেরের বেরি ভেঙ্গে গেছে। আমার নিজের ঘেরও তলিছে। এক কথায় আমার ইউনিয়নের মাছ চাষিরা বেশ বিপদে পড়েছে বৃষ্টিতে।

বাসতলী এলাকার ঘের চাষি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবু সাইদ বলেন, বৃষ্টির পানিতে সব একাকার হয়ে গেছে। পানি মাঠ থেকে নামতে পারেনি, কারণ নদী-খালে পানিতে পরিপূর্ণ। যার ফলে ঘেরগুলোর অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার সবগুলো ঘের ডুবে গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থেকে বৃষ্টি না থাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যাও কমেছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক এলাকার পানি নেমে গেছে। বৃষ্টি না হলে আশা করি এখনও যারাও পানিবন্দি আছেন তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টির পানিতে জেলার ৪ হাজার ২৩০টি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এতে আমাদের চাশিদের ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা যাতে পুনরায় মাছ চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com