‘ভীষণ মন খারাপ নিয়ে এক তরুণের জন্য লিখছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যার জন্য লিখছি সেই তরুণ বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশি হিসেবে উড়িয়েছেন লাল-সবুজ পতাকা। নয়বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। দৌড়েছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। এমন একজন তরুণ যিনি বিশ্বের মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করেছেন বারবার, আমলাতন্ত্রের লাল ফিতা তাকে আটকে রাখতে চাইছে।’-আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো ফেসবুকে লিখেছেন সাংবাদিক শরিফুল হাসান।
মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক পদে কর্মরত এই অ্যাথলেট। যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন তিনি, উড়িয়েছিলেন লাল-সবুজ পতাকা।এরপর মালয়েশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চলতি বছরে আয়রনম্যানের আরও দুটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন আরাফাত। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের মতো আয়রনম্যানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে প্রতিবারই আলাদা করে নির্বাচিত হতে হয়। কিন্তু বিধি বাম! অফিস থেকে ছাড়পত্র পাননি আরাফাত। দেশের জন্য একের পর এক সম্মান বয়ে আনা মানুষটির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়াই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হতাশা নিয়ে নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে সামছুজ্জামান আরাফাত লিখেছেন, ‘আয়রনম্যান বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ও আয়রনম্যান ৭০.৩ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ডিরেক্ট কোয়ালিফাই করেও অংশগ্রহণ করার জন্য অফিস থেকে এনওসি হলো না। অনেক মানুষ চেষ্টা করেছেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সরকারী আদেশও জারী করেছিল। জানি না কেন অনুমতি হলো না। নিজের মধ্যে এতো বড় অসহায় এবং হতাশবোধ এর আগে কখনো আসেনি।
দেশের জন্য একের পর এক সম্মান বয়ে আনলেও দিনশেষে তিনি একজন চাকুরিজীবী। আর তাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিরেখে কিছু করতে পারেন না। কর্মস্থল থেকেও বলা হয়েছে, চাকরি করে স্পোর্টস করা যাবে না। আরাফাত লিখেছেন, ছোট একজন মানুষ আমি, অফিসের ডেস্কের বাহিরে কোনো স্বপ্ন দেখা উচিত না। সরাসরি নির্দেশনা পেয়েছি চাকরী করে স্পোর্টস করা যাবে না। কোন আন্তর্জাতিক স্পোর্টসে যাওয়া যাবে না। অফিস এবং স্পোর্টস একসাথে চলবে না! অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি ০২টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাই করে। কতো গুলো স্বপ্ন! মাত্রতো শুরু হয়েছিলো যাত্রাটা। এই অল্প সময়ে থমকে যাবে!! বাংলাদেশ ক্ষমা করো! আমি পারলাম না!’
যারা জানেন না, আয়রনম্যান হলো এক দিনে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর কঠিনতম ট্রায়াথলন। এই খেলার ক্রীড়াবিদদের বলা হয় ট্রায়াথলেট। আয়রনম্যান হতে হলে একজন প্রতিযোগীকে ১৭ ঘন্টার মধ্যে ৩.৮ কিমি সাঁতার, তারপর ১৮০ কিমি সাইক্লিং, তারপর ৪২.২ কিমি দৌড় শেষ করতে হয়। শুরুটা হয় সাঁতারের মধ্য দিয়ে। সাঁতার শেষ করে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে সাইকেল চালাতে হয় ১৮০ কিলোমিটার। সর্বশেষ ধাপে দৌড়াতে হয় একটি ফুল ম্যারাথন (৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার) দৌড়।