সাইনবোর্ডে পুলিশ ফাঁড়ি লেখা থাকলেও সেখানে ফাঁড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। সাইনবোর্ডের যেখানেই চোখ যাবে চোখে পড়বে আলু, পেঁয়াজ, চা-পাতাসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। নেই পুলিশের সেবা দাতা কিংবা গ্রহীতার কোনো অস্তিত্ব। এমন একটি পুলিশ ফাঁড়ির দেখা মিলবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরশহরের পুরাতন বাজারে।
শ্রীমঙ্গল থানার পাশাপাশি শহরের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুরাতন বাজারে ছিল একটি পুলিশ ফাঁড়ি। দীর্ঘদিনের এই পুলিশ ফাঁড়ি এখন বাণিজ্যিক মার্কেট। ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে একেকটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মোট ১৫ টি দোকান রয়েছে নবনির্মিত মার্কেটটিতে। তবে সেই টাকা কোন অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারে নি জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা।
সরকারি জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে কি না, তারও কোনো জবাব দিতে পারেনি জেলা পুলিশ। এমনকি তথ্য অধিকারে আবেদন করেও পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে কোনো তথ্য। তবে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অর্গানোগ্রামে শ্রীমঙ্গল শহর পুলিশ ফাঁড়ি এখনো আছে। সেই পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে একজন এসআইসহ পুলিশের ৩ জন পদায়ন রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাঁড়ির এসআই ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় অবস্থান করে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মিতব্য দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া উত্তোলনের কাজ করেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সরকারি জমিতে কোনো অনুমোদন ছাড়া মার্কেট নির্মাণের তথ্য।
জানা যায়, মৌলভীবাজার থেকে সদ্য নিযুক্ত (বদলি) হওয়া (২৭ জুলাই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া জেলায় যোগদানের পর পুলিশ ফাঁড়িতে এই মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো প্রকার অনুমোদন ও টেন্ডার ছাড়াই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে এই মার্কেট নির্মাণ করেন। তবে মার্কেটের নামে কত টাকা নিয়েছেন ও কতটাকা খরচ হয়েছে তার হিসেবে মিলেনি। ফাঁড়িকে মার্কেট রূপান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছি কি না সে তথ্য দিতে পারেনি জেলা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, শ্রীমঙ্গল ফাঁড়ির নামে একজন ইন্সপেক্টর পদায়ন হওয়ার কথা। শহর অনেক বড়, চুরি ডাকাতি হয়, এখানে শহর ফাঁড়ি খুব প্রয়োজন ছিল। এছাড়া শ্রীমঙ্গল সার্কেল অফিসের কোনো নিজস্ব ভবন নেই। আবাসন সমস্যা রয়েছে পুলিশের। ফাঁড়ি অপ্রয়োজনীয় মনে হলে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন নিয়ে এই জায়গাটিতে প্রয়োজনে আবাসনের জন্য বা সার্কেল অফিস করা যেতো।
সরজমিনে গিয়ে দেখা দেখা যায়, পূর্বের শ্রীমঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির জায়গার উপর পাকা ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক এসব বরাদ্দ নিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তারা ঘর নেওয়ার আগে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে একেকটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তাদের অগ্রিমের টাকা থেকে ৮০% ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে কর্তন হবে। কিন্তু অগ্রিমের টাকা সরকারের কোন কোষাগারে দেওয়া হয়েছে তা তারা বলতে পারেন নি।
এই মার্কেটে দোকান ভাড়া নেওয়া মিটন পাল বলেন, দোকানের জন্য যে টাকা দিয়েছি সেই টাকার ৮০% প্রতিমাসে ভাড়া হিসেবে কাটা হয় বাকি ২০% প্রতিমাসে দেই। এই ফাঁড়িতে কাগজে কলমে কর্মরত আছেন এসআই জিয়াউর রহমান তার বসার কোনো জায়গা না থাকলেও তিনি মার্কেটের ভাড়া তোলেন।
এসআই জিয়াউর রহমান জানান, আমি আগে ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলাম, কিন্তু ২ মাস হলো বদলি হয়েছি। ভাড়া আমি তুলি না এটা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
এই তথ্যের জন্য প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা খুরশেদ আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা কতটাকা অগ্রিম হিসেবে জমা দিয়েছেন এবং কোন অ্যাকাউন্টে সেটা আমি বলতে পারব না। তবে তারা মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দেন।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গির হোসেন সরদার বলেন, উপর মহলের সিদ্ধান্ত যেহেতু তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে চাইলে মার্কেটের পেছনে জায়গা আছে সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করা যাবে। বর্তমানে ফাঁড়িতে কাগজে কলমে কেউ কর্মরত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন এসআই ছিলেন তিনি এখন অন্য বিভাগে আছেন। তবে, ফাঁড়িতে কনস্টেবল কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। তবে ফাঁড়ির বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারছি না, যেহেতু আমি নতুন যোগদান করেছি তাই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখবো।