সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার—স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে এই তিন নীতি থেকে দেশ আজ অনেক দূরে। তাই টেকসই গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার, অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন, আইনের শাসন ও জনবান্ধব রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাত দফা দাবি জানিয়েছে নৈতিক সমাজ।
শনিবার (১২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
নৈতিক সমাজ মনে করে—চলমান রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা অন্যায়, অনিয়মকে নিয়ম করেছে, নৈতিক মূল্যবোধের ধস নামিয়েছে। নৈতিকতার এ অধঃপতন রুখতে দরকার নৈতিক চেতনার শক্তিশালী জাগরণ, নৈতিক বিপ্লব। তাই প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনের সকল ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষা শাণিত করতে হবে। সকল ধর্মেই নৈতিক শিক্ষা আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নৈতিক আইন করতে হবে। আইন ভঙ করলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
রাজনীতি, নেতৃত্ব ও দলগুলোর ওপর মানুষের বিশ্বাস নেই। বিশ্বাস ফেরাতে রাজনীতিতে অপরাধ, দুর্নীতি ও সহিংসতা মুক্ত করতেই হবে। রাজনীতি হবে অলাভজনক। রাজনীতি পেশা নয়, ব্যবসা নয়, অর্থবিত্ত অর্জনের জায়গা নয়। রাজনীতিতে নিঃস্বার্থ জনসেবা গড়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আর নির্বাচন ব্যবস্থা গড়তে হবে নিরপেক্ষ, অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি মুক্ত।
প্রত্যেকের মধ্যে আইন মেনে চলার ও মানবাধিকার রক্ষার মানসিকতা গড়তে হবে। গুম, হত্যা, ক্রস ফায়ার, কর্তব্যে অবহেলা ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আইন ভাঙলে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সবাইকেই শান্তি পেতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কোন দায় মুক্তি থাকবে না। বিভিন্নভাবে অশুদ্ধ রাজনৈতিক আচরণ ও অপঃসংস্কৃতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে।
৪০ লাখ ঝুলে থাকা মামলা ৫ বছরে মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। হস্তক্ষেপ মুক্ত করতে হবে আদালত; ন্যায় বিচার করতে হবে দ্রুত ও নিশ্চিত। নিশ্চিত করতে হবে আদালতের ও বিচারকদের স্বাধীনতা। তাদের নিয়োগ ও পদায়ন হবে প্রধান বিচারপতি/জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে। এ বিষয়ে কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে না। বিচার ব্যবস্থা হতেই হবে স্বাধীন, দুর্নীতিমুক্ত ও গরীব বান্ধব।
শুধু অবকাঠামো নয়, কিছু সূচকের উন্নয়ন নয়, ঢালাও মাথাপিছু আয় নয়; উন্নয়নের মাপকাঠি হবে- প্রান্তিক, দরিদ্র্য ও মেহনতি মানুষের উন্নত জীবন-মান, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকারের সূচক। উন্নয়ন হবে গণমুখী, অর্থাৎ কৃষক-শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিত শতভাগ মানুষের নিশ্চিত আয়, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ, কর্ম ও বাসস্থানের। গরীব বান্ধব আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। উৎসাহিত করা হবে ব্যবসায়িক উদ্যোগ, নিশ্চিত হবে সামাজিক সুরক্ষা ও সকলের সমান সুযোগ।
উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান—এসব হবে মৌলিক অধিকার। সকলের জন্য উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে দিতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে মেধাবীদের উদ্ভাবন ও গবেষণার সুযোগ করে দেয়া। শিক্ষাঙ্গনে থাকবে না কোন দলবাজি। প্রত্যেক জেলায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র হবে, তৈরী হবে নবীন গবেষক ও উদ্যোক্তা। বিদেশে যাবে লাখ লাখ দক্ষ প্রশিক্ষিত শ্রমিক। শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের বেতন, ভাতা ও মর্যাদা হবে সর্বোচ্চ।
পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু উষ্ণায়ন এখন সারা বিশ্বের এবং বাংলাদেশেরও অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাই বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই করতে হবে সকল উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কোন গোষ্ঠি স্বার্থে নয়। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, প্লাষ্টিক দূষণ, খাদ্যে ভেজাল আমাদের আয়ু কমিয়ে দিয়েছে। বনাঞ্চল, জলাশয়, হাওড়, বাওড়, নদী, ক্ষুদ্র, সবই দূষণ মুক্ত ও সুরক্ষিত করতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রন, নদী ভাঙন ও নদী শসনের স্থায়ী সমাধান হবে। নবায়নযোগ্য হতে হবে জ্বালানী এবং উন্নয়ন হতেই হবে সকলের জন্য।
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মেজর (অব.) জেনারেল আ ম সা আ আমিন, সদস্য মোজাম্মেল প্রমুখ।