নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে শিক্ষা উপকরণের। বাজারে কাগজের পর এবার দাম বেড়েছে বলপয়েন্ট কলমের। ফেনীর বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে প্রতিটি ৬ টাকা দামের কলম ৮ টাকায় ও ১০ টাকার কলম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্টেশনারি দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেটে কলমের ওপর ভ্যাট আরোপ করায় দামে প্রভাব পড়েছে। এখন কয়েকটি কোম্পানির কলমের দাম বাড়লেও খুব শীঘ্রই অন্য কোম্পানির কলমেরও দাম বাড়বে।
ফেনী বড় বাজারের ব্যবসায়ী ছাদিয়া এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নুরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বক্সে (১৪৪টি) দাম বেড়েছে ২৩০ টাকা। যার ফলে ৬ টাকার কলম এখন ৮ টাকা এবং ১০ টাকার কলম ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া জেল কলম এবং অন্যান্য দামি কলমগুলো ৫ টাকা হারে বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেল পেন আগে ৯ টাকায় কিনে ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতাম। তবে এখন সেটি কিনতেই হচ্ছে ১২ টাকায়। আর বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকায়। দাম বাড়তি হওয়াতে বিক্রিতে প্রভাব পড়ছে৷ অভিভাবকরা অনেকে এখনও বাড়তি দাম সম্পর্কে জানে না। ফলে বিক্রির সময় নানা কৈফিয়ত দিতে হয় তাদের। এছাড়া আগে যারা ১ ডজন কলম নিয়ে যেত তারা এখন অর্ধেক নিয়ে যাচ্ছে। দামের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে।
রাকিব নামে আরেকজন স্টেশনারি ব্যবসায়ী বলেন শুধু বাজেটের জন্য দাম বেড়েছে এমন নয়। দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা শুনে বাজেটের আগেই কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কলমের মোড়কে নতুন দাম না থাকলেও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
শিক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ কলমের দাম বাড়ায় বিপাকে নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, জাতিকে শিক্ষিত করতে হলে শিক্ষা উপকরণে ভ্যাট আরোপ না করা উচিত। কলমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী প্রয়োজন অনুযায়ী কলম কিনতে পারছে না।
সুলতানা বিনতে নূর নামে ফেনী সরকারি কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে জানান, বাজারে প্রায় প্রতিটি কোম্পানির কলমের দাম বেড়েছে। আগে দুইটি কলম কিনতে ১০ টাকা খরচ হতো। তবে এখন একই পরিমাণ কলম কিনতে গুণতে হচ্ছে ১৬ টাকা। এতে দুটি কলমে খরচ বেড়েছে ৬ টাকা। এছাড়াও একটু দামি কলম কিনতে গেলে সেগুলোর দাম আরও বেশি। ১৫ টাকা দিয়ে একটা কলম কিনতে হবে কখনও ভাবিনি।
রিয়াজ উদ্দিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, খালি চোখে হয়তো ২-৩ টাকা বেশি না, মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি টাকা কিন্তু আমাদেরই খরচ হবে। কাগজের দাম বেশি, এখন কলমের দামও বাড়ল। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা দিন দিন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
আহমেদ হোসেন নামে এক অভিবাবক বলেন, পড়ালেখা করতে হলে কলম তো লাগবেই। তবে প্রতি ডজন কলমে দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। এতে সংসারের খরচ বেড়েছে ।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছি আমরা। তবে শিক্ষা উপকরণের দাম কম হলে ভালো হয়। কারণ অনেক নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে, তাদের জন্য ব্যয় নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তবে সরকারের চেষ্টা থাকলেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সংকট দেখিয়ে কারসাজি করে৷ এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ানো উচিত নয়। উল্টো শিক্ষাখাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত। এতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমবে। বর্তমানে যে দাম বেড়েছে তা সরাসরি শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব পড়বে।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে কলমের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে তা বাজেট আলোচনায় কমিয়ে ৫ শতাংশে চূড়ান্ত করা হয়।