রাজবাড়ীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে পরিচালিত অধিকাংশ ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে। তবে অবৈধ ক্লিনিক বন্ধসহ চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১২০টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। আবার কয়েকটির লাইসেন্স থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নবায়ন করেনি।
জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে কয়েকজন নিজস্ব চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্সসহ জনবল থাকার কথা, তা নেই কোনোটিতেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই ডিপ্লোমা পাস করা প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এরপরও বছরের পর বছর চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্র পাবলিক হেলথ মোড়ে অবস্থিত এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। তারপরও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। সদর হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এখানে।
কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাবিবুল্লা শেখ হাবিব বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। শুধু আবেদন করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি ভুল হয়েছে।’
এ প্রতিষ্ঠানের কিছুটা দূরেই বড়পুল এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে নুরজাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ প্রতিষ্ঠানেরও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিলন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। আবেদনের অনলাইন কপি নিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলেছি।
এছাড়া যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে, তারাও বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালাক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলার ১২০টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র না নিয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নজরদাড়ি করতে পারছি না। তবে দ্রুতই অবৈধভাবে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন জানান, ‘জেলার সবকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের লাইসেন্স নবায়ন নেই বা লাইসেন্স নেই, তাদের দ্রুত লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স করতে বলা হয়েছে। তারা নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’