বাংলাদেশে ডেঙ্গু মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান ডব্লিউএইচওর

গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এরমধ্যে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আর দেশে ডেঙ্গুর এমন নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

জাতিসংঘের সহায়ক এ সংস্থাটি ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে— মশার বিস্তার কমাতে যেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফুল হাতার জামা পরার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশে জুনের শেষ থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৪৮৩ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ৩২৭ জন। সংস্থাটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে এবং আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন>>> ‘সংসারটা গুছিয়ে এনেছিলাম, ডেঙ্গু তছনছ করে দিল সব’

ডব্লিউএইচও আরও বলেছে, শুধুমাত্র জুনেই ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২০৪ জন। যা মোট আক্রান্তের ৬৩ শতাংশ এবং মোট মৃত্যুর ৬২ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে যে পরিমাণ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল সেই তুলনায় এ বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুকে নজিরবিহীন হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘ডেঙ্গুর আধিক্যতা দেখা যাচ্ছে  আস্বাভিক আকস্মিক বৃষ্টির কারণে। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আদ্রতা। এসব কারণে পুরো বাংলাদেশজুড়ে মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে মাঝারি অথবা কোনো লক্ষণই দেখা যায় না এবং তারা দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন, তবে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং এ কারণে মৃত্যু হতে পারে। যদি লক্ষণ দেখা যায়— তাহলে সেটি সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয় এবং এগুলো অন্তত দুইদিন বা সাতদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর লক্ষণ হতে পারে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যাথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, ফোলা গ্রন্থি এবং র‌্যাশ।

তবে জ্বর চলে যাওয়ার পরও মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আর মারাত্মক ডেঙ্গু হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, অব্যাহত বমি, দ্রুত নিশ্বাস, নাগ দিয়ে রক্ত পড়া, ক্লান্তি, অস্বস্তি, বমিতে রক্ত, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, শরীর ফ্যাকাসে ও ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এবং প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভব হবে।

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মশার কামড়ে ছড়ায় ডেঙ্গু

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমণ রোগ, এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ডেঙ্গু গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকাগুলোতে অনেকবার তাণ্ডব চালিয়েছে। এটি ছড়ানোর জন্য এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস মশা দায়ী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একটি মশা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন এটি সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে শরীরের ব্যথা কমানো। আর ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। তবে নন-স্ট্রয়োডিয়াল এবং প্রদাহ বিরোধী ওষুধ যেমন ইবুপ্রোফেন এবং এসপিরিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এসব ওষুধের কারণে রক্তপাত হতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ ও মূল্যায়ন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের মূল্যায়নে বলেছে বাংলাদেশ ডেঙ্গুর ‘উচ্চ’ ঝুঁকিতে রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি এবং ব্যাপক ভৌগলিক বিস্তৃতির কারণেই সংস্থাটি এমন মূল্যায়ন দিয়েছে।

মশার বিস্তৃতি রোধে ডব্লিউএইচও সমন্বিত ভেক্টর ব্যবস্থাপনা (আইভিএম) গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া মানুষকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে তারা। যার মধ্যে রয়েছে মশার প্রজনন সহায়ক স্থানগুলো ধ্বংস করা।

আরও পড়ুন>>> ডেঙ্গু যেভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে

এছাড়া সতর্কতা হিসেবে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও ঘরের পানি জমিয়ে রাখার পাত্র বা ট্যাংক পরিষ্কার ও ঢেকে রাখা, মশারি ব্যবহার ও স্প্রে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে ফুলহাতা শার্ট-প্যান্ট পরা, মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার, দরজা-জানালায় মশা প্রতিরোধী জাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com