শ্রাবণের শেষ বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি

সকাল থেকেই মেঘ ছেয়ে থাকা আকাশ ঝরিয়েছে ঝুম বৃষ্টি। রাজধানীতে শ্রাবণের শেষভাগের (২৯ শ্রাবণ) বিরতিহীন বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। সেই সঙ্গে জলাবদ্ধতার বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বের হয়েছেন কর্মজীবি মানুষ। তবে সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কম ছিল। এতে অফিসগামী মানুষের ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে অনেককেই ছাতা মাথায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মহাখালী অফিসে গেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তুষার আহমেদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকালে অফিসে আসার জন্য যে সময় বের হয়েছি—তখন ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বাসের সংখ্যা অনেক কম ছিল। দীর্ঘ সময় বৃষ্টির মধ্যে কাকভেজা শতশত অফিসগামীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।’মতিঝিল থেকে সিএনজিতে যাত্রী নিয়ে গুলশান পর্যন্ত গেছেন সিএনজি চালক খোরশেদ আলম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কোনও ট্রিপই (ভাড়া) পাচ্ছিলাম না। পরে মতিঝিল থেকে গুলশান একটা ট্রিপে আসার সময় মতিঝিল-রাজারবাগ-মগবাজারের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা ঠেলে আসতে হয়েছে। অনেক চিন্তায় ছিলাম; ইঞ্জিনে পানি ঢুকলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেত। অনেক যাত্রীদের ছাতা মাথায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহন অনেক কম ছিল।’নগরীর মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়াদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ অনেক সড়ক ও অলগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে বাসে করে রামপুরা পর্যন্ত আসা এক যাত্রী আফতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাসে উঠার আগে একবার বৃষ্টিতে ভিজেছি, নামার পর আরেকবার ভিজলাম। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত হয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস তাই সবাই কাজে বের হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গণপরিবহন না পেয়ে অনেককেই সড়কে বিড়াম্বনা সহ্য করতে হয়েছে।’অপরদিকে বৃষ্টিকে পুঁজি করে অল্প দূরত্বে যেতে বাড়তি ভাড়া দাবি করেন রিকশা চালকরা, এমন অভিযোগ জানিয়ে ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একে তো ছাতা মাথায় বের হওয়া, অন্যদিকে রাস্তায় জলাবদ্ধতা। তাই কেউ হেটে যেতে পারছেন না। সাবাই রিকশা খুঁজেছে আর এই সুযোগে রিকশা চালকরাও ভাড়া ডাবল করে দিয়েছেন। আমিও বৃষ্টি আর জলাবদ্ধার ভোগান্তি এড়াতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় এসেছি। আগে এই পথের ভাড়া ছিল ২০ টাকা, কিন্তু আজ ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৫ টাকা।’

এদিকে আগামী ১৬ আগস্ট (বুধবার) পর্যন্ত সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার (১৩ আগস্ট) সকালে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কামাল মল্লিক ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে, ঢাকার এ সময়ে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পরিস্থিতির বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কামাল বলেন, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com