দলের দুঃসময়ে যারা সামনে ছিল, যারা দুর্দিনের কর্মী, কমিটি করার সময় তাদের সামনে রেখে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদককে এমন নিদের্শ দিয়েছেন বলে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (১২ আগস্ট) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য অংশ নেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তারপর একে একে সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাদের বিভাগীয় রিপোর্ট পেশ করেন। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেন যখন সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন তখন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেছা হক কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। তিনি তার এলাকার সাংগঠনিক অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমি অনেক ত্যাগী নেতার নাম দিয়েছিলাম। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটিতে রাখা হয়নি। টাকাওয়ালা দেখে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু টাকা আছে তাদের কমিটিতে রাখবে, আর যাদের টাকা নেই তাদের রাখবে না, সেটা তো হতে পারে না। টাকা থাকলেও সে দলের ত্যাগী কী না যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিতে হবে। দুর্দিনের কর্মীদের নেতা বানাতে হবে। আজকে যারা আসছে তারা দলের মধ্যে গণ্ডগোল করছে। দুঃসময় এলে আমার দুর্দিনের নেতাকর্মীরাই থাকবে। ওরা (ব্যবসায়ী, আমলা, হাইব্রিড নেতা) কিন্তু আসবে না। সুনামগঞ্জে যে সমস্যা রয়েছে, আপনারা বসে ঠিক করে ফেলুন।
আরও পড়ুন>>> দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসার লোভ নেই আ.লীগের
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নিদের্শ দিয়েছিলেন এলাকায় কারও বিরুদ্ধে কেউ যেন কিছু না করে, সবাই মিলে-মিশে থাকতে হবে। বিএনপির মধ্যে যে ভেদাভেদ ছিল সেটা তারা ভুলে গিয়ে এক হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনো পারেনি। এখনও আমরা নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরা বলাবলি করি। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সব ওয়ার্ড ও থানার কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করার নিদের্শ দিয়েছেন দলের সভাপতি। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করার সময় এমন নিদের্শনা দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা বলেছেন ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে না পারলে মহানগরের কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। কমিটি না থাকার কারণে গত ৬ আগস্ট বিশেষ বর্ধিত সভায় মহানগরের নেতাদের বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দলের প্রধান।
আরও পড়ুন>>> এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন ২ সেপ্টেম্বর, জনসভা করবে আ.লীগ
সূত্র আরও জানান, গত ৬ আগস্ট বিশেষ বর্ধিত সভায় সব ভারপ্রাপ্তকে ভারমুক্ত করা হয়েছিল। সেই বিষয়টি সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা ও উপজেলা গিয়ে মিটিং করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আওয়ামী লীগের সব উন্নয়ন তৃণমূলের তুলে ধরার জন্য নেতাদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
সভায় অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় বিএনপির সব অপকর্ম তুলে ধরার জন্য নিদের্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। জিয়াউর রহমানের আমল, তারেক জিয়ার আমলের যত অপকর্ম হয়েছে সেগুলো তুলে ধরতে বলেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের সব উন্নয়ন তুলে ধরারও বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়।