দেশের উত্তরাঞ্চলে অসংখ্য খাল-বিল, পুকুর, নদ-নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। একটা সময় এসব জলাভূমির স্থানীয়ভাবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন এগুলো ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ ও ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। ফলে প্রতিবছর অনাকাঙ্ক্ষিত অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষি ও কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে ব্যাপক।
এরকম পরিস্থিতিতে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা পুনরায় খনন করে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। ইতোমধ্যে ৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএমডিএ’র ৬ প্রকল্পসহ সর্বমোট ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ও সেচ সম্প্রসারণে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিএমডিএর মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে সরকার। এতে করে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশ উন্নীত করা সহজ হবে। একই সঙ্গে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’র অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।এদিকে বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর তালুক ধর্মদাস এলাকায় ৬৬ শতক জমির উপর ৮ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫ তলা বিশিষ্ট বিএমডিএ’র রংপুর বিভাগীয় অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার নলেয়া নদী পুনরায় খনন, পীরগাছা উপজেলায় ৫ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার আলাইকুমারী নদী, বদরগঞ্জ উপজেলায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৪ দশমিক ৫৭ একর নইমুল্লা বিল, মিঠাপুকুরের দূর্গাপুর এলাকায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৬৩ একর চিথলী বিল , বদরগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮ দশমিক ৮৯ একর ভারারদহ এবং পটুয়াকামরি বিল পুনরায় খনন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর অঞ্চলের কৃষি এবং কৃষকের সার্বিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খননের ফলে রংপুরের কয়েকটি নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বিভিন্ন খাল-বিল-নালা ও পুকুর পুনরায় খনন ও জলাবদ্ধতা দূর করে হাজার হাজার কৃষকের জমিতে সোনার ফসল উৎপাদন বাড়ছে।
রংপুর অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব হলেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে বন্ধ করা হয়েছে গভীর নলকূপ স্থাপন। নদীনালার পানি বাড়তে থাকে সেচের আওতায় কিন্তু সেটিও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বরেন্দ্র এলাকার বৃষ্টির পানি আহরণে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর পুনরায় খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পুনরায় খননের ফলে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূর করে ৩৫০ হেক্টর অনাবাদি পরিত্যক্ত জমি চাষের উপযোগী করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ এবং ওষুধি গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশবান্ধব ভূ-কাঠামো গড়ে তোলা হবে। শুধু তাই নয় প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০৯ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছরে ২৩০ কিলোমিটার খাল, ১০টি বিল, ৯৮টি পুকুর পুনরায় খনন করে সঞ্চিত ও ধারণকৃত পানির সাহায্যে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া ২১৩টি এলএলপিতে ৩১৯ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ করে সেচের পানির অপচয় রোধের মাধ্যমে কৃষকের সেচ ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান তিনি।