মাইশার বিয়ে হয়েছে দুই মাস আগে। জামাই তানজিম এসেছে মাত্র ২ বার। এই দুই বারে আমার (শ্বশুর) সঙ্গে জামাইয়ের ১০ মিনিটও কথা হয়নি। জামাইয়ের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের জানা নেই। আমার ইচ্ছে ছিল মেয়ের বিয়ে দেব ছেলের তিনটা গুণ দেখে। শিক্ষা, ভালো কাজ আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি। এই তিনটি গুণ তানজিমের মধ্যে ছিল।
সোমবার সকালে (১৪ আগস্ট) নাটোর সদর উপজেলার চাদপুরের পাবনাপাড়ার নিজ বাড়িতে ঢাকা পোস্টকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন সায়েদুল ইসলাম ওরফে দুলাল। তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি সন্দেহে গেল শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া মাইশা ইসলামের (২০) বাবা।
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া মাইশা ইসলামের বাবা দুলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই মাস আগে তানজিমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার মেয়ের বিয়ে হয় অনলাইনে ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে। সেখানে মাইশার বায়োডাটা দেওয়া ছিল। এই বায়োডাটা দেখে কমপক্ষে ৩০টির বেশি ছেলে প্রস্তাব পাঠায়। এ সময় ম্যারেজ মিডিয়ায় মাইশার বায়োডাটা দেখে তানজিম প্রস্তাব পাঠায়। পরে আমরা কয়েকজন সরেজমিনে ছেলের বাড়িতে গিয়ে দেখে আমাদের তাকে পছন্দ হয়। ছেলের বাড়ির আশপাশে বেশির ভাগই হিন্দু পরিবার। তাদের জিজ্ঞাসা করেছি ছেলে সম্পর্কে। তারাও ভালো বলেছে।
তিনি আরও বলেন, ছেলের বাবা হেলাল উদ্দিন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তানজিম সবার বড়। তাদের এলাকার ভালো প্রভাব আছে। তানজিমকে আমাদের পছন্দ হলেও তার বাবার কাজ ভালো লাগেনি। তিনি নামাজ পড়তেন না। ছেলের আচরণ ভালো লাগায় তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেই। বিয়ের দুই মাসে জামাই আমাদের বাড়িতে মাত্র ২ বার এসেছে। আমার ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান আছে। আমি সেখানেই ব্যস্ত থাকি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি ঠিকই। তবে জামাইয়ের বিষয়ে আমার খুব বেশি জানা ছিল না।
মাইশার বাবা তার মেয়ে সম্পর্কে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাইশা চাঁদপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। পরে চাঁদপুরের বাইপাসে মহিলা কলেজে পড়াশোনা করেছে। আমার মেয়ের জেনারেল লাইনে পড়াশোনা। তার তেমন ইসলামিক জ্ঞান নেই। আমরা পারিবারিকভাবে ধর্ম মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার মেয়ের বাইরের কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা না। আমার মেয়ের কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়টি নিয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, তাদের উপরে নজরদারিতা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
প্রসঙ্গত, উগ্রবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে ২০২২ সালে র্যাব তানজিমকে গ্রেপ্তার করেছিল। তানজিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করছিল। এছাড়া বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত তানজিমের শ্বশুর মাইশার বাবা সায়েদুল ইসলাম দুলাল ও চাচা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করে। সেই অভিযানে গ্রেপ্তার সায়েদুল হাজতবাসের পর জামিনে রয়েছেন। তবে চাচা ফজলুর এখনো কারাগারে।