ছবি ফাঁসের দায়ে প্রেমিকের নামে মামলা, ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার আদেশ

গোপন ছবি ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগে নিজের সাবেক প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এক নারী। আর এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি আদালত রিভেঞ্জ পর্ণের ভিকটিম হিসেবে ওই নারীকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তার সাবেক প্রেমিককে।

বুধবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতের নথিপত্রে ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শুধু ‘ডিএল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালে ওই নারী তার সাবেক প্রেমিকের বিরুদ্ধে হয়রানির ওই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি তার গোপন বেশ কিছু ছবি অনলাইনে পোস্ট করেন এবং এই ঘটনার মাধ্যমে তাকে ‘জনসমক্ষে লজ্জাজনক’ অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়।

ওই নারীর আইনজীবীরা বলছেন, যেসব নারী ‘ছবিভিত্তিক যৌন হয়রানির’ শিকার হয়ে থাকেন, আদালতের এই রায় তাদের জন্য একটি জয়। লিড ট্রায়াল অ্যাটর্নি ব্র্যাডফোর্ড গিল্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ছবি ফাঁস করে দেওয়ার মাধ্যমে ওই নারীর যে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, আদালতের এই রায় তা ফিরিয়ে দেবে।

বিবিসি বলছে, আইনজীবীরা মূলত জুরির কাছে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। গিল্ড বলেন, ‘আমরা আশা করি এই রায়ে যে বিস্ময়কর পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি একটি বার্তা দেবে এবং অন্যদেরও এই ধরনের ঘৃণ্য কার্যকলাপে জড়িত হওয়া থেকে বিরত রাখবে।’

আদালতের নথি অনুসারে, ভুক্তভোগী ওই নারী এবং তার সাবেক প্রেমিক ২০১৬ সালে ডেটিং শুরু করেছিলেন। সম্পর্ক চলাকালীন প্রেমিকের সাথে নিজের অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করেছিলেন তিনি। তবে ২০২১ সালে তাদের ব্রেক-আপ হয় এবং এরপরে তার সম্মতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইটে তার ছবিগুলো পোস্ট করা হয় অভিযোগ করেন ওই নারী।

এরপর অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি এগুলোর লিংক ওই নারীর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এমনকি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার সাবেক প্রেমিকার ফোন, ইমেইল ও সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট, এমনকি ওই নারীর মায়ের বাড়ির ক্যামেরায় প্রবেশাধিকার নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে, যা ওই নারীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীকে একটি বার্তা পাঠান অভিযুক্ত ওই আসামি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ইন্টারনেট থেকে নিজেকে মুছে ফেলার জন্য তোমার সারাজীবন ব্যয় করবে তুমি। যতজনের সঙ্গে তোমার পরিচয় হবে সবাই এই গল্প জানবে। হ্যাপি হান্টিং।’

ভুক্তভোগী ওই নারীর আইনজীবীরা দাবি করেন, সাবেক প্রেমিক ছবিগুলো প্রকাশ করে ওই নারীকে একইসাথে মানসিক হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানি করেছেন।

উল্লেখ্য, ‘রিভেঞ্জ পর্ণ’ বা প্রতিশোধমূলক পর্ণ হচ্ছে যৌন মিলনের ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে প্রকাশ করা। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সঙ্গীকে বেকায়দায় ফেলা। এই ধরনের অপরাধে অতীতেও যুক্তরাষ্ট্রে বড় অংকের জরিমানা করার ইতিহাস আছে।

২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় পর্ণ সাইটে ব্যক্তিগত ছবি আপলোডের পর এক নারীর সাবেক পার্টনারকে ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানার আদেশ দিয়েছিল আদালত।

বিবিসি বলছে, ম্যাসাচুসেটস এবং সাউথ ক্যারোলিনা ছাড়া সকল মার্কিন অঙ্গরাজ্যেই ‘রিভেঞ্জ পর্ণ’ বিরোধী আইন রয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com