নায়িকার সঙ্গে ছবি নিয়ে নির্মাতার ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তি

ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা জাহারা মিতুর এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নির্মাতা দীপংকর দীপনের ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন এই পরিচালক।

ঘটনার শুরু মূলত সম্প্রতি সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ নামের একটি অনুষ্ঠানে নির্মাতা ও নায়িকার ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে। যেখানে পরীমণির ছেলে রাজ্যকে কোলে নিয়ে ছবি তুলতে দেখা যায় দুজনকে। সেই ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে মিতু লেখেন, “আমাদের একটা ‘পরীর বাচ্চা’ আছে।”

এরপরই শুরু হয় তুমুল আলোচনা। নায়িকার এমন ক্যাপশন নিয়ে নেটিজেনরাও বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক মন্তব্য করেন। সেই প্রভাব গিয়ে পড়ে নির্মাতার ব্যক্তিগত জীবনেও।

তাই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন দীপংকর দীপন। যেখানে তিনি জানান, মিতুর এই পোস্ট তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে।

স্ট্যাটাসের শুরুতেই মিতুর উদ্দেশে প্রশ্ন করে এই নির্মাতা লিখেছেন, এটা কি পোস্ট ভাই? এই পোস্টের ছবি ও লেখা মিলে কি দাঁড়ায় সেটা কি তুমি বোঝো না মিতু? কমেন্ট দেখ যা তুমি ডিলিটও করনি। আর এদিকে অন্যদের বোঝাতে বোঝাতে আমার জীবন শেষ, যে জাহারা মিতুর সাথে আমার কোন (বিশেষ) সম্পর্ক নেই বা দহরম মহরম সম্পর্কও নেই। একবার দুবার দেখা হয়েছে- তাও কোন অনুষ্ঠানেই। অনেকে বিশ্বাস করে, অনেকেই করে না। খিক খিক করে হেসে বলে, ‘ভাই ছবি ও পোস্টের ভাষা তো অন্য ইঙ্গিত দেয়।’ আর পারিবারিক অশান্তির কথা তো নাই বললাম, সেটা সবাই বুঝবে।

এরপর দীপন লিখেছেন, ছবি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা গিয়ে রাজ্যকে নিয়ে ছবি তুলেছি। অথচ বিষয়টা  ছিলো পুরো উল্টো। আমি ভালো মতো খেয়ালই করিনি সেদিন আমার পাশে কে ছবি তুলেছে। সিচুয়েশনটা তেমনই ছিল। সেদিন ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের’ লোগো উন্মোচনের অনুষ্ঠান ছিলো। অনুষ্ঠানের প্রায়ই শেষের দিকে নির্মাতা চয়নিকা দি এসে বললেন, ‘দাদা পরীমণি চায় আপনার সাথে রাজ্যর ছবি থাকুক। পরী অপেক্ষা করছে।’ আমি রাজ্যর কাছে গেলাম। পরী রাজ্যকে আমাকে কোলে তুলে দিল। রাজ্য ভীষণ কিউট একটা বাচ্চা। এত মানুষের মধ্যে বাচ্চাটাকে সামলে রাখা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলাম। আমি শক্ত হয়ে রাজ্যকে সাবধানে কোলে আগলে হাঁটছিলাম। ঐ সময়ে অনেকে এসে ছবি তুলেছে। সেসব দিকে নজর দেয়ার মত অবস্থা আমার ছিল না। অনেককে আমি দেখিওনি। এমনকি আমি নিজেও কোন ছবি তুলতে পারিনি। আমি অস্থির ছিলাম রাজ্যর কোন অসুবিধা যেনো না হয়।

গতকাল রাতে আমাকে ইনবক্সে ক’জন নক করলো। সেখানে জানতে পারলাম স্ক্রিনশটের পোস্টটি সম্পর্কে। পরে জানলাম পরীর পোস্ট করা অনেক ছবি থেকে একটি ছবি জাহারা মিতু রিপোস্ট করেছে। তাতে আমার প্রবলেম নেই। কিন্তু ভেরিফাইড পেইজে আর কোনো ছবি পোস্ট না করে শুধু আমাকে নিয়ে ছবিটা পোস্ট করা কেন? পরীর সাথেও তো ছবি ছিল। তাও না হয় ঠিক আছে, কিন্তু এই পোস্টের লেখা এরকম কেন? দুটো মিলে এই পোস্ট আমাকে খুব বিব্রত, বিরক্ত, দু:খিত করেছে। ছবির পোস্টের কিছু কমেন্ট পড়লেই বুঝবেন। আর ব্যক্তিগত জীবনে কি হয়েছে, হচ্ছে, সেটা আর না বলি।

হয়তো বলবেন মিতুকে সরাসরি বলতেন, ডিলিট করে দিত পোস্টটা। দিতও হয়তো। কিন্তু পোস্টটা তো পাবলিক ছিল। অনেক মানুষ যারা এই পোস্ট দেখেছে, তারা আমাকে চেনে। তাদের মনে তৈরী হওয়া ধারণা আমি বদলাতে পারতাম না। কিছু দেখে যারা কিছু জানতে চায় তাদের বিষয়টা বোঝানো যায়, কিন্তু যারা কিছু জানতে না চেয়ে ধারণা করে ফেলে তাদের ভুল ধারণা বদলানো যায় না। কখনো যায় না, জানাই যায় না। তাই আমাকেও পাবলিকলি বলতে হলো। যদিও সব সমস্যা বলতেও পারলাম না।

এই নির্মাতা লেখাটা শেষ করেছেন এভাবে, আসলে আমরা কীভাবে ফেসবুক পোস্ট করবো, ছবির ক্যাপশন কি দিবো, কি ভাষা ব্যবহার করবো সেগুলো খেয়াল করা খুব প্রয়োজনীয়। বাক্য বা শব্দ চয়নের কারণে পুরো বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কারো জীবন যেন বিব্রতকর না হয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবন কঠিন না হয়ে যায়, সেটা লক্ষ্য রাখা ভীষন দরকার। প্লীজ।

দীপনের এই পোস্টের কমেন্টবক্সে মন্তব্য করেছেন জাহারা মিতু। তিনি লিখেছেন, আমি মাত্রই আপনার পোস্টটা দেখলাম। কিছু বলতে পারতাম দাদা। কিন্তু বলবো না কারণ কেনো জানিনা এই পোষ্টটাই অনর্থক মনে হলো আমার কাছে। আর সব মন্তব্য পড়া কি সম্ভব হয় আমার বা আপনার পক্ষে?

ছবি তোলার যে বিষয়টা বললেন তাতে একটু অবাক হলাম। যাই হোক এটা নিয়েও না বলি। আমি ছোট মানুষ তাই সব কথা বলতে নেই। রাজ্য আমাদের পুরো বাংলাদেশের। হয়তো অর্থটাই ভুল বুঝেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে কি প্যারায় আছেন সেটা তো আমরা জানিনা। তবে এই পোস্টে আমার অজান্তে বৌদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। আর স্ক্রিনশটের প্যাঁচের খেলা থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসেছি। এরা পারেই প্যাঁচ লাগাতে। এখন হয়তো দু-চারটা নিউজ হবে এইতো।

এরপর মিতু লেখেন, আমিও আবার স্ট্যাটাস দিতে পারতাম। কিন্তু কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করাটা আমার স্বভাব নয়। তাই দাদাভাই এখানেই উত্তরটা দিলাম। আপনাকে ছবি থেকে ক্রপ করে দিলে ব্যাপারটা আপনার জন্য মারাত্মক অসম্মানের হতো। যেটা আমি চাইনি। আপনি আমার কাছে সম্মানীয়। তাই এখনও আপনাকে ক্রপ করে ফেলে না দিয়ে বরং অনলি মি করলাম। ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি ফিরে আসুক দাদাভাই। দোয়া রইল।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com