নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আদালতের জব্দ করা পণ্য কারসাজি করে কম মূল্যে নিলাম করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার এক আদালতের বিরুদ্ধে। ওই আদালত নিলামে অংশ নেওয়া পছন্দের পক্ষকে ১৩০ টাকা মূল্যের চিনি ৫০ টাকায় (কেজি) দিয়ে দিয়েছেন। আবার নিলাম অনুষ্ঠানেও করেছেন লুকোচুরি। আদালতের সরকারি কৌঁসুলী বলছেন, নিলামের প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি।
আদালতের জব্দ করা কোনো পণ্যের নিলামের সময় সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিলামে অংশগ্রহণকারী ক্রেতাদের উপস্থিত থাকার নিয়ম রয়েছে।সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জসিম একটি নিলাম অনুষ্ঠান করেছেন যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন না। আবার নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুক অন্য অনেককে পাশ কাটিয়ে অল্প কয়েকজনের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে তিনি নিলামটি পরিচালনা করেছেন। এছাড়া তিনি বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য নিলাম করে দিয়েছেন। যা নিয়ে আদালত অঙ্গনে সমালোচনা হচ্ছে।মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই দারুস সালাম থানায় ১০ হাজার ৬৭৫ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই চিনি নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন।ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল
গত ১৩ আগস্ট ওই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন নিলাম অনুষ্ঠিত হবে না মর্মে আদালত থেকে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা গতকাল ১৬ আগস্ট জানতে পারেন ১৩ তারিখের ওই নিলাম ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে! তারা কিছু জানেন না।
জানতে চাইলে আদালতের দারুস সালাম থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট এ নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে ১০ আগস্ট কোর্ট জানায়, ১৩ আগস্ট নিলাম হবে না। পরবতীতে নিলামের নতুন তারিখ জানানো হবে। মামলার নথি কোর্টেই ছিল। পরে কবে আদেশ হয়েছে আর নিলাম হয়েছে তার কিছুই আমি জানি না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে জানান নিলাম নাকি হয়ে গেছে, সেও কিছু জানে না। যে নিলাম পেয়েছে সে নাকি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোর্টের নোটিশ নিয়ে গেছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকতা দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক আবু জাফর তালুকদার মানিক বলেন, ‘১৩ তারিখে নিলাম হওয়ার কথা ছিল, সেটা পিছিয়েছে। কিন্তু আমি কোনো কাগজ পাইনি। মৌখিকভাবে শুনেছি ১৪ তারিখে নিলাম হয়ে গেছে। আমার কাছে কোনো কাগজ আসেনি।’নিলামে তিনি উপস্থিত ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো কাগজই পাইনি কবে নিলাম হবে, আমি জানিই না কী হয়েছে।’
বাজারে খোলা চিনির বর্তমান মূল্য ১৩০ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। জানা গেছে, ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই নিলামে বিচারক মোহাম্মদ জসীম ১০ হাজার ৬৭৫ কেজি চিনি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ভ্যাটসহ ওই চিনি বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮২ টাকায়। নামমাত্র মূল্যে চিনি বিক্রির কারণে সরকারের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বাজার মূল্যে বিক্রি করলে প্রায় ১৪ লাখ টাকা পেত সরকার।
আদালতের নথি দেখে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত চিনির নিলামে অংশ নেন আবির হোসেন পল্লব, নূর হোসেন, রনি, জামিল হোসেন ও তুহিন আল মাহমুদ নামে ৫ ব্যক্তি। নিলাম পান আবির হোসেন পল্লব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালতের নেজারত শাখার নাজির মো. রেজওয়ান খন্দকার বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কিছু বলতে পারছি না। সিএমএম (চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) স্যারের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারব না। নিলামের কোনো নোটিশ আমি পাইনি।’
নিলাম হয়ে যাওয়ার পর বোর্ডে নোটিশ টানানো হয়েছে বলে অভিযোগ, এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমি নোটিশ দেখে বলতে পারব। এছাড়া আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পালের কাছে এ নিলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় এই নিলাম হয়েছে তা সঠিক হয়নি। একজন বিচারক হিসেবে তার আরও যাচাই-বাছাই করা উচিৎ ছিল। ৫০ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করলে তো সরকারের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘নিলামের যে যথাযথ প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে আইনের যেমন ব্যত্যয় ঘটে তেমনি সাধারণ মানুষও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।’