সৌদিতে হামলা বন্ধের হুথি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জাতিসংঘের

সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন হামলা বন্ধে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাটির ইয়েমেন বিষয়ক দূত মার্টিন গ্রিফিথস জানান, ঘোষণার মাধ্যমে কয়েক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হবে এক প্রতিবেদনে খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা। তবে হুথি বিদ্রোহীরা হামলার দায় স্বীকার করলেও জাতিসংঘ বলছে, এই হামলার পেছনে কোনও কোনওভাবে ইরান জড়িত। অবশ্য শুরু থেকে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে তেহরান। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের ওপর তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০ সেপ্টেম্বর সৌদিতে হামলা বন্ধের ঘোষণা দেয় হুথি।

১৪ সেপ্টেম্বরের হামলার পর সৌদি আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। হুথি বিদ্রোহীরা এ হামলার দায় স্বীকার করলেও এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে হামলার নেপথ্যে ইরান জড়িত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তেহরান। এই ঘটনার জেরে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই পরপরই গত শুক্রবার সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বন্ধ করা হবে জানিয়েছেন ইয়েমেনের হুথিদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল মাসাত।

জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক দূত মার্টিন গ্রিফিথস বিবৃতিতে বলেন, ‘হুথি বিদ্রোহীদের ঘোষণার বাস্তবায়নই যুদ্ধ বন্ধের শক্তিশালী বার্তা দেবে।’ এ সময় বিদ্রোহীদের দেওয়া ওই প্রস্তাবের সুযোগ নেওয়ার তাগিদ দেন মার্টিন গ্রিফিথস। তিনি অযথা বাগাড়ম্বর, সামরিক তৎপরতা ও সহিংসতা হ্রাসে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন।

সৌদিতে হামলা বন্ধে হুথি বিদ্রোহীদের নতুন সিদ্ধান্ত তাদের আগের সব ঘোষণার বিপরীত। কেননা, এতোদিন পর্যন্ত সবসময়ই তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছিল। এই প্রথম বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো। জাতিসংঘও তাদের এই ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

শুক্রবার হুথি পরিচালিত আল মাসিরাহ টেলিভিশনে বিদ্রোহী নেতা মাহদি আল মাসাত বলেন, সৌদি আরবে সামরিক ড্রোন, ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্য সব ধরণের অস্ত্র নিয়ে হামলা বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছি। রিয়াদের দিক থেকেও আমরা একই ধরণের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি।

হুথি নেতা বলেন, তারা (সৌদি আরব) এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে ব্যর্থ হলে প্রত্যাঘাতের অধিকার আমাদেরও রয়েছে। তবে চলমান যুদ্ধ কোনও পক্ষই লাভবান হবে না।

ইয়েমেনে যুদ্ধে লিপ্ত বিভিন্ন পক্ষকে সত্যিকার আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান হুথি নেতা আল মাসাত। তিনি বলেন, এই আলোচনা কাউকে বাদ না দিয়ে বিস্তৃত জাতীয় পুনর্গঠনকে ত্বরান্বিত করবে। যুদ্ধ বন্ধের বড় লক্ষ্য হবে ইয়েমেনিদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেকে রক্ষা করা আর সাধারণ দায়মুক্তি অর্জন।

হুথি বিদ্রোহীদের ওই ঘোষণার পর সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বলেন, ‘আমরা তাদের কথা নয়, কাজ ও কর্মতৎপরতা মূল্যায়ন করছি। আমরা দেখবো তারা প্রকৃতপক্ষে সেটি (যুদ্ধবিরতি) করছে কিনা?’ তবে এ সময় তিনি ওই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে বলেন, ‘রিয়াদ ওই হামলার জবাব দেওয়ার জন্য এ সংক্রান্ত তদন্তের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তদন্তের ফলাফলের হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী সানা দখলে নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পালিয়ে যান হাদি। ২০১৫ সালের মার্চে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিত্রদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে রিয়াদ। সৌদি জোটের অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটির কোটি কোটি মানুষ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com