২ বছর ধরে বিদুৎহীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, ছেড়ে যাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা

সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের লাল ও সাদা রংয়ের টিনের ঘরগুলো। বসবাসের সুবিধার জন্য ঘরের সামনে ও পেছনে রয়েছে বারান্দা, গভীর নলকূপ, টয়লেট ও গোসলখানা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকের সামনে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, যেখান থেকে প্রত্যেক ঘর পর্যন্ত গেছে বৈদ্যুতিক তার।

কিন্তু গত দু বছর এখন পর্যন্ত ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা।চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজাহানপুরে নির্মাণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ২২০টি ঘর। এর মধ্যে ১৯০টি ঘরেই এখন কেউ আর থাকেন না। দুই বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখনো সেখানকার সব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমনকি দুই বছর ধরে বসবাস করা ঘরগুলোতেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে দিন দিন ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ঘরগুলো নষ্ট  হয়ে হচ্ছে।

শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হরিশপুর মহলদারপাড়া গ্রামে সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে নির্মাণ করা হয় ২২০টি ঘর। যেখানে ভূমিহীন, অসহায়, দরিদ্র ও নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে ঘর দেওয়া হয়। প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে ৬ শতাংশ জমি ও একটি ঘর দলিল করে দেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছর ধরে বসবাস করলেও তা করা হয়নি। প্রায় ১৫০ পরিবার ঘরে উঠলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় ঘর ছেড়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ।

বর্তমানে হরিশপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি পরিবার বসবাস করছেন। আরও ১০-১৫টি পরিবার মাঝেমধ্যে থাকলেও নিয়মিত নয়। বাকি ঘরগুলোতে ঝুলছে তালা। বসবাস না করায় জঙ্গল দেখা দিয়েছে অনেক ঘরের সামনে। এমনি ঘর, টিউবওয়েল ও টয়লেট নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষরোপণ, সড়ক নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটি খাস ও অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। সেগুলো উচ্ছেদ করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল দুই বছর আগে। প্রায় ১৫০টি পরিবার এসব ঘরে ওঠে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় ধীরে ধীরে সবাই বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। কেউ থাকতে চাইছেন না। এখন ৩০-৪০টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মাঝেমধ্যে এসে আবার চলে যায়।

দুই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব রাকিব আলী। তিনি জানান, ঘরে উঠানোর আগে ব্যারাকের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটি দেওয়া হয়। ঘর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে তার। কিন্তু লাইন সংযোগ না দেওয়ায় বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ঘরটা একটু ঠান্ডা হলে তারপর ঘুমাতে যাই না হলে গরমে ঘুমানো যায় না। বেশি গরম পড়লে বাইরে সারারাত অপেক্ষা করি।

গৃহবধূ সায়েমা খাতুন বলেন, এখনকার যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া কিছুই হয় না। অথচ পরিবার নিয়ে আমরা গত দুই বছর ধরে বিদ্যুৎ ছাড়া বসবাস করছি। ছেলেমেয়ে পড়ার সমস্যা হচ্ছে। তীব্র গরমের সময় ঘরের মধ্যে থাকা যায় না। গাছপালাও নেই যে তার নিচে আশ্রয় নেব। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সব হারিয়ে এখানে এসেছি। তা না হলে আমরাও কবে চলে যেতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা আল মামুন জানান, স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপিকে বলেও কোনো কাজ হয়নি। শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছে সবকিছু। লোকজন বসবাস না করায় গোসলখানা, টয়লেট, টিউবওয়েল নষ্ট হতে শুরু করেছে। এমনকি সুরক্ষা দেয়াল না থাকায় ইতোমধ্যে ঘরের পাশ দিয়ে ধস শুরু হয়েছে।

শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, খুবই সংকট ও ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা। আমরাও বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় বিদ্যুৎ অফিসে সংযোগের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে ঘরে বসবাস করতে চাইছেন না সুবিধাভোগীরা। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা ২৯টি পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ঘরে বিদুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রওশন আলী ও জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন মুঠোফোনে জানান, এই প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যাতে তারা সেখানে বসবাস করেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রত্যেক ব্যারাকের ৫টি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪০ টাকা। উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ চতুর্থ ধাপে ২৩০ পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিন ধাপে জেলায় ৪ হাজার ৫৮৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com