প্রসব বেদনা কমাবে লাফিং গ্যাস!

লাফিং গ্যাস। এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল দীর্ঘদিনের। গবেষণায় জানা গেছে, প্রশ্বাসের মাধ্যমে যখন নাইট্রাস অক্সাইড গ্রহণ করা হয়, তা রক্তের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের ভিতর মানুষের মস্তিষ্কে চলে যায়। তবে এটি কিন্তু রক্তের সঙ্গে মেশে না। আর তাই মানবদেহে এর স্থায়িত্বও খুব অল্প সময়ের জন্য হয়।

মস্তিষ্কে গিয়ে এই নাইট্রাস অক্সাইড গ্লুটামেট রিসেপটরে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এই রিসেপটর নিষ্ক্রিয় হলে, ব্যথাবোধ থাকে না। আর এই গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে যন্ত্রণাবিহীনভাবে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজে।

বেশ কয়েক দিন আগে শুরু হয়েছিল এই পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। এই ক’দিনের মধ্যে পরপর ২৫ জন মা সন্তানের নরমাল ডেলিভারি করলেন, প্রসব যন্ত্রণা ছাড়াই! উক্ত কলেজের প্রসূতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, নাইট্রাস অক্সাইড (লাফিং গ্যাস) ও অক্সিজেন সমান সমান পরিমাণে মিশিয়ে রাখা হচ্ছে ডেলিভারি রুমে।

সন্তান প্রসবের সময়ে প্রসূতিকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে বলা হচ্ছে। ওই গ্যাস গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের যে অংশটি ব্যথার অনুভূতি উৎপন্ন করে, সেই অংশটি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আনন্দের অনুভূতি বাড়ে। এর ফলেই প্রসবের যন্ত্রণা অনেকটা কম অনুভব করেন মায়েরা।

পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘লাফিং গ্যাস ও অক্সিজেন সমপরিমাণে মিশিয়ে যে গ্যাস তৈরি হয়, তা এনটোনক্স নামে পরিচিত। সন্তানসম্ভবা মায়ের যখন সন্তান প্রসবের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়, একটি সিলিন্ডার থেকে ওই গ্যাস নাকে দেয়া হয় মাস্কের মাধ্যমে। তাতেই ফল পাওয়া গেল। আমরা ছাত্র জীবনে বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে পড়তাম। কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। এখন সেই চেষ্টা সফল হলো।

প্রসূতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আরো জানান, এই গ্যাসের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ফলে মা ও সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। গত এক মাসে ২৫ জন সন্তানসম্ভবাকে এই গ্যাস প্রয়োগ করে, সফল ও যন্ত্রণাহীন নর্মাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ অন্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে চালু করার উদ্যোগ নিতে চলেছে সরকার।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন