অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর নামে ফেসুবক আইডি তৈরি প্লেনের টিকিট কাটার কথা বলে ১৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সম্প্রতি রংপুরে অভিযান পরিচালনা করে মো.মিজানুর রহমান (৩৪) নামে এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান রংপুরের কোতোয়ালি থানার বাসিন্দা।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, মো. মিজানুর রহমান এক অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসীর নামে ফেসবুক আইডি খুলে তার বন্ধুকে ম্যাসেজ দেন। ম্যাসেজ দিয়ে বলেন ‘আমি এখন অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছি। প্লেনের ওয়াইফাই ব্যবহার করে আপনাকে নক দিয়েছি। আমার চট্টগ্রাম-ঢাকা যাওয়ার প্লেনের চারটি টিকিট কেটেছি। টিকিটগুলো কনফার্ম করার জন্য এজেন্সিকে টাকা পাঠাতে হবে। আমি একটি বিকাশ নম্বর দিচ্ছি, আপনি টাকা পাঠিয়ে টিকিটগুলো কনফার্ম করে দেন আমাকে। তার কথা মতো ওই ব্যক্তি বিকাশ নম্বরে ১৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাঠানোর পর তিনি দেখেন তার বন্ধুর আইডি থেকে সব ম্যাসেজ ডিলিট করা হয়েছে। পরে তার সন্দেহ হলে তিনি একই নামে তার বন্ধুর আরেক আইডিতে নক দিয়ে জানতে পারেন, তিনি অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন। তার বন্ধুর নামে ওই আইডিটি ছিল ভুয়া।
তখন তিনি বুঝতে পারেন যে প্রতারিত হয়েছেন কোনো চক্রের মাধ্যমে। ঘটনার দীর্ঘ দিন পর গত ১৪ আগস্ট ডিএমপির রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্তে মিজানুরের সম্পৃক্তরা পায় পুলিশ। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সাইফুল রহমান আজাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অভিযুক্ত মিজানুরকে অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসীর ফেসবুক আইডি থেকে ছবি ডাউনলোড করে এবং তথ্য নিয়ে Yousuf Khan নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। গত এপ্রিল মাসে এই আইডি থেকে ওই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর বন্ধু হাবিবকে ম্যাসেজ দিয়ে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশে আসছি। এখন প্লেনে আছি। প্লেনের ওয়াইফাই ব্যবহার করে আপনাকে নক দিয়েছি। আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার চারটি এয়ার টিকিট বুকিং করেছি। প্লেন থেকে আমি টাকা দিতে পারছি না। আপনাকে একটি এজেন্সির বিকাশ নম্বর দিচ্ছি, ওই নম্বরে ১৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে আমার টিকিটগুলো কনফার্ম করে দিন। প্রতারককে বন্ধু মনে করে ওই বিকাশ নম্বরে ১৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন হাবিব। পরবর্তীতে গত ২৯ এপ্রিল বন্ধুর পরিচয়ধারী আইডির সকল ম্যাসেজ ডিলিট দেখতে পেয়ে হাবিবের মনে সন্দেহ জাগে। তখন হাবিব তার বন্ধুর আসল আইডিতে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার বন্ধু অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন।
যেভাবে প্রতারক হয়ে উঠেন মিজানুর
ডিবি সূত্রে জানা যায়, মিজানুরের টার্গেট ছিল প্রবাসীর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা। টার্গেট ব্যক্তিদের নাম, ছবি ব্যবহার করে তাদের নামে ফেক ফেসবুক আইডি খোলেন মিজানুর। আবার কখনো কখনো তাদের অ্যাকাউন্টও হ্যাক করে ফেলতেন মিজানুর। পরে টার্গেট ব্যক্তির পরিচিতজনদের প্লেনের টিকেট কনফার্ম করতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চেয়ে ম্যাসেজ দিতেন। এভাবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।মিজানুর আগে মোবাইল অপারেটর রবির সিম বিক্রির কাজ করতেন। সেই কাজ চলে গেলে তিনি তার ভাইয়ের সাথে ভাঙারির দোকান চালাতেন। এরই মধ্যে তিনি বিমানের টিকেট প্রতারণা করে অর্থ আয়ের কৌশল আয়ত্ত করে তার বন্ধু স্থানীয় অন্যান্য দুই একজনের কাছ থেকে। এই কাজে অল্প সময়ে অধিক লাভ দেখে সে এই কাজ অব্যাহত রাখে
