ঘুমের ঘোরে বোবায় ধরে!

ফারজানা ইয়াসমিনের বয়স ত্রিশের কোঠায়। প্রায় রাতেই তিনি গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং তার মনে হয় শরীরের ওপর যেন ভারী কেউ চাপ দিয়ে আছে। সেটা এতটাই ভারী যে তিনি নিশ্বাস নিতে পারেন না। এমনকি পাশে কেউ শুয়ে থাকলে তাকেও ডাকতে পারেন না। তিনি বলেন, ডাকা তো দূরের কথা, অনেক চেষ্টা করলে গোঙানির মতো শব্দ করা সম্ভব হয়। ভয়ে বুক ধড়ফড় করতে থাকে। মনে হয় এই বোধহয় দম আটকে মারা যাব। পাশে কেউ শুয়ে থাকলে তারাও গোঙানি শুনে ভয় পেয়ে যায়।

এমন অভিজ্ঞতার কথা আমাদের আশপাশে আরো অনেকের কাছ থেকে শোনা যায়। একে অনেকে ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকেন। কিন্তু চিকিত্সাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। ঐ ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এতে তিনি ভীষণ ভয় পেয়ে যান। অনেকে মনে করেন ঘুমের মধ্যে তাকে ‘ভূতে ঠেসে ধরেছে’। স্লায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। ঘুমের ঐ পর্যায়টিকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম। রেম হলো ঘুমের এমন একটি পর্যায়, যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোনো পেশি কোনো কাজ করে না। এ কারণে মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়। আর এই সময়টাতে ভয়ের কোনো স্বপ্ন দেখলে ঐ ব্যক্তি সত্যি সত্যি ভৌতিক কোনো ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করে ফেলেন। যে কোনো বয়সে স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইএস-এর তথ্য মতে, তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সিরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছে তারা। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়া, অসময়ে ঘুমানো, মাদকাসক্ত হলে, পরিবারে কারো এই সমস্যা থাকলে ইত্যাদি কারণে এটি হতে পারে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সাধারণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। রাতে অন্তত ছয় ঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়। প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করা। ঘুমের জন্য শোবার ঘরটিতে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে, যেন সেই ঘরে কোলাহল না থাকে। ঘরটি যেন অন্ধকার থাকে ও তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে। ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার এবং চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে নিজের মনকে প্রবোধ দিতে হবে যে ভয়ের কিছু নেই। এর পরেও মনে করলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (সকাল ৬:১১)
  • ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com