জয়পুরহাটে ফিশ শিঙাড়া-রোল খেতে মানুষের ভিড়

সবজি কিংবা কলিজা দিয়ে তৈরি শিঙাড়া, বল ও রোল এই খাবারগুলো দেশে সুপরিচিত। এসব খাবার মানুষের বেশ পছন্দেরও। এবার এই পছন্দের খাবারগুলো বানানো হচ্ছে মাছ দিয়ে। জয়পুরহাটে এক চা দোকানে মাছ দিয়ে বানানো এমনই শিঙাড়া, বল ও রোলের দেখা মিলবে।

আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের বটতলী বাজারের অনুকূল চন্দ্রের চা-দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মুখরোচক এসব খাবার। উপজেলা থেকে উত্তর দিকে পাঁচ কিলোমিটার অথবা সদরের জামালপুর চারমাথা থেকে দক্ষিণে একই দূরত্বে এই বাজারের অবস্থান। বাজারটি বেশ ছোট হলেও সেখানে ছোট-বড় ১৫ থেকে ২০ টি দোকান আছে।

দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ফিশ শিঙাড়া, ফিশ বল ও ফিশ রোল ভাজা হচ্ছে। ক্রেতারা দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। স্টলের ভেতরে রাখা টেবিলে জায়গা না পেয়ে অনেকেই দোকানের সামনে ভিড় করছেন। দূরদূরান্ত থেকেও আসছেন লোকজন। এসব খাবারের চাহিদাও অনেক বেশি। অনুকূল তার দোকানে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব খাবার বিক্রি করেন।

আক্কেলপুরের গোপীনাথপুর থেকে আসা মো. পেসতা নামের একজন বলেন, এই দোকানে মাছের তৈরি বল ও শিঙাড়ার নাম শুনে খেতে এসেছি। মাছের তৈরি এসব খাবার সুস্বাদু ও মজাদার।

আমিরা গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, বিকেল হলে এই বাজারে সময় কাটাতে আসি। অনুকূলের এই দোকানের পেঁয়াজু, আলুর শিঙাড়া ও ডিমের চপ বানানো হতো। কিছুদিন যাবৎ মাছ দিয়ে শিঙাড়া, বল ও রোল বানানো হচ্ছে। এটা খেতে ভালো। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে আসতেছে। অন্য কোথাও মাছ দিয়ে তৈরি এমন শিঙাড়া পাওয়া যায় না।

বটতলী বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, আক্কেলপুরের উপজেলার পাশে জালালপুর গ্রামে অনুকূল চন্দ্রের বাড়ি। একটি কলেজে এলএমএসএসের চাকরি করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির পাশাপাশি বিকেলে চা ও পেঁয়াজু বিক্রি করছেন। চার মাসে আগে মাছের তৈরি শিঙাড়া, রোল ও বল বিক্রি শুরু করেন। তাকে সাহায্য করেন তার দুই ছেলে ও এক কর্মচারী। প্রথম দিকে মাছের তৈরি এসবে তেমন সাড়া পাননি। তবে এখন দূরদূরান্তের মানুষ এগুলোর স্বাদ নিতে আসেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। প্রতিটি ফিস সিঙাড়ার দাম পাঁচ টাকা। ফিস রোল ও বলের দাম ১০ টাকা করে।

চা দোকানি অনুকূল চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে চা স্টলে বিকেলে পেঁয়াজু বিক্রি করছি। প্রথমে আধা কেজি কালাই দিয়ে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করি। এখন ৮ থেকে ১০ কেজি কালাই লাগে। আমার স্ত্রী গোলাপি রানী বেসরকারি একটি সংস্থার মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন প্রকল্পের (পিকেএসএফের আর্থিক সহযোগিতায় এসোর একটি প্রকল্প) সদস্য। ওই সংস্থা মাছের শিঙাড়া, রোল ও বল তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রথম প্রথম তেমন সাড়া পেতাম না। এখন অনেক সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন ফিস শিঙাড়া ও বল পাঁচশ পিস এবং ফিস রোল তিনশ পিস বিক্রি হয়। পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই ও সিলভার কার্প মাছ দিয়ে এসব খাবার তৈরি করা হয়।

অনুকূলের স্ত্রী গোলাপী রানী বলেন, আমরা বাড়ি থেকে মাছ দিয়ে শিঙাড়া, বল ও রোল তৈরি করে দিই। দোকানে গিয়ে ভেজে বিক্রি হয়। মাছ পরিষ্কার করে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হয়। তারপর ব্লেন্ড করে এসব তৈরি করা হয়। দোকানে বেচাকেনা ভালো হয় তাই আনন্দের সঙ্গেই কাজ করি।

শাহিন আলম নামের একজন বলেন, অনুকূলের দোকানে ভিন্ন স্বাদের শিঙাড়া পাওয়া যায়। এ কারণে ফিস শিঙাড়া খেতে এসেছি। এটি অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এটি খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরাও বলে নতুন জিনিস, খুবই ভালো।

বেসরকারি সংস্থা এসোর মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে তাজা মাছের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত মাছ বা রেডি টু ইট ফিস প্রোডাক্ট আমাদের খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অনেকের পরিবারের ছোট বাচ্চারা মাছের কাঁটা বা গন্ধের কারণে মাছ খেতে চায় না। রেডি টু ইট ফিস প্রোডাক্ট সম্পূর্ণ গন্ধমুক্ত, কাঁটামুক্ত এবং পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন থাকায় সব বয়সের মানুষ এটা সহজেই খেতে পারবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com