জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের। অর্ধেকেরও বেশি পদ খালি থাকায় মাঠপর্যায়ে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন পশু পালনকারীরা। পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ওষুধও। অচলাবস্থা নিরসনে দফায় দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় হতাশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সম্প্রতি জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে কথা হয় রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মেল্লা সমস্যা বাহে। এ্যটে কোনা আসি কাকো ঠিকমতো পাওয়া যায় না। লোকজন নাই, ওষুধ নাই। একদিনেও কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না।’
কথা হলে নগর মীরগঞ্জ এলাকার হারুন অর-রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এখানে জনবল সংকটের কারণে অনেক সমস্যা। কখনো কখনো এসে কর্মকর্তাদের অফিসে পাওয়া যায় না। খুব বেশি প্রয়োজন পড়লে ফোন দিয়েও সেবা মিলে না।
জানা গেছে, রংপুর জেলায় এক হাজার ৬৯০টি খামার ও গৃহপালিত প্রায় ১০ লাখ গরু আছে। আট উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের। কিন্তু জনবল সংকট থাকায় কয়েকজনকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে চাহিদামতো পশু পালনকারীরা সেবা না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। শুধু জনবল সংকট আর ওষুধের অভাবে এবার জেলায় লাম্পি স্কিন রোগে হাজারের বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র বলছে, জেলা দপ্তরে একজন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, একজন অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণ অফিসার, উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, একজন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, একজন উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক, চালক, নিরাপত্তা প্রহরীসহ ১১ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে কাগজে-কলমে রয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে আবার দুজন দীর্ঘদিন ধরে অন্যত্র প্রেষণে আছেন। ফলে এই কার্যালয়ে কর্মরত মাত্র পাঁচজন।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, পুনর্বাসন ও উপকরণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, পশুপাখিকে টিকাদান, চিকিৎসাসেবাদান, মাঠ পরিদর্শন, খামারিদের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি বিতরণ, পশুপাখির সুস্থতার সদন প্রদান, উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ, খামার নিবন্ধন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় জরুরি সেবাদানের কাজগুলো এই দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়।
দপ্তরটিতে কর্মরতরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, চালক ও নিরাপত্তাপ্রহরীর পদ খালি। উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও অফিস সহায়কও প্রেষণে আছেন। ফলে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে, চালক না থাকায় কর্মকর্তারা যেতে পারছেন না মাঠপর্যায়ে। এতে কার্যালয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার পশু পালনকারীরা। সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে জনবল নিয়োগের জন্য দপ্তরটি সর্বশেষ ২৬ জুন মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
রংপুর ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর একটি বিভাগীয় শহর। অথচ এ শহরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তর লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এতে আমাদের খামারিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ ও লোকবল নিয়োগের জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জোবায়দুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে এখানে কাগজে-কলমে সাতজন থাকলেও উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ঢাকা ও অফিস সহায়ক বদিউজ্জামান বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে আছেন। জনবল না থাকায় অফিসের কাজে ঝামেলা পোহাতে হয়। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো এখানে যোগ দিয়েছি। লোকবল সংকটের কারণে সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, শিগগিরই সমাধান হবে।
সেবাপ্রার্থীদের ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. এনামুল বলেন, সরকারিভাবে পাওয়া বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।