ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: লেবাননের ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত ।

ইসরায়েল সীমান্তের দক্ষিণ লেবাননে অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সংঘর্ষের জেরে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এদিকে ঝুঁকি জেনেও অনেক ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরে নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সোমবার আইওএম জানায়, গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের পর থেকে লেবাননের ১৯ হাজার ৬৪৬ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুত মানুষের বেশির ভাগ দক্ষিণ লেবানন থেকে পালিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর থেকে হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু ফিলিস্তিনেই নয়, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এই হামলায় লেবাননের সাংবাদিকসহ অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ ইসরায়েলি সেনারও। সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘাত আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েলের ধারণা, হিজবুল্লাহ হামাসকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে।

এদিকে খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর আশ্রয়ের অভাবে গাজার দক্ষিণেও পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ইসরায়েলের বিমান হামলা। ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলা, সেই সঙ্গে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার নির্দেশ; সব কিছু উপেক্ষা করে গাজার উত্তর প্রান্তে নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন সপ্তাহখানেক আগে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা। কারণ, যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা দক্ষিণ দিকে ছুটেছিলেন, সেটা তারা পাননি। বরং সেখানে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ, হচ্ছে হামলাও। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গত সপ্তাহে গাজা সিটি এবং উত্তরের অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রায় ১১ লাখ ফিলিস্তিনি চলে যান বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল।

কিন্তু এখন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তর থেকে দক্ষিণে আসা গাজার বাসিন্দারা খাবার, পানি ও আশ্রয়ের অভাবে নিদারুণ অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও দক্ষিণের খান ইউনিস নগরীতে রবিবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৪৩৬ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে গাজার প্রায় ১৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

খান ইউনিসে অবস্থান করা সাংবাদিকরা জানান, গত কয়েক দিনে সেখানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার শরণার্থী এসেছেন। নগরীতে তিল ধারণের জায়গা নেই। অনেকে হাসপাতাল, ক্লাব, রেস্তোরাঁতে আশ্রয় নিয়েছেন। কারো কারো কপালে সেটাও জোটেনি। তারা খোলা আকাশের নিচে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউয়ের পরিচালক টমাস হোয়াইট বলেন, বেশির ভাগ বাস্তুচ্যুত মানুষ দিনে মাত্র এক লিটার পানি আর দুটি ছোট রুটি খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। মানবিক এই সংকট, সঙ্গে দক্ষিণের বেসামরিক এলাকাগুলোতে অব্যাহত বিমান হামলার অর্থ, কেউ কেউ উত্তরে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।

মূলত, লোকজন উত্তরে তাদের সব কিছু ফেলে রেখে এসেছেন, যেমন তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা। দক্ষিণে এসে একটি আশ্রয় খুঁজে পেতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে, খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকেই অনিরাপদ পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। আসলে দক্ষিণের পরিস্থিতিও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। খান ইউনিসে পালিয়ে আসা রিয়াদ জাবাস বলেন, আমাদের গাজা সিটি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, খান ইউনিস নিরাপদ এলাকা, এখন পুরো গাজার কোথাও আসলে নিরাপদ স্থান নেই।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com