মানবতাবিরোধী অপরাধে টিপু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক শিবির নেতা রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর)  বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

রায়ের জন্য মঙ্গলবার  (১০ ডিসেম্বর) এই দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৭ অক্টোবর এ মামলায় শুনানি শেষে সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমান) রাখেন।

গত বছরের ২৭ মার্চ এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

অভিযোগ চূড়ান্তের পর তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালীয়ায় দশজনকে হত্যা, দুইজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অপরাধ উঠে এসেছে তদন্তে। এসব অপরাধে এ আসামির বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি আর্মি ও স্থানীয় রাজাকাররা। স্থানীয় সেই সব রাজাকারদের মধ্যে টিপু সুলতানই বেঁচে আছেন। তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তীতে ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি’ বলে উল্লেখ করেন আব্দুল হান্নান খান।

তিনি বলেন, আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান।

তদন্ত সংস্থা আরও জানায়, ১৯৮৪ সালের পর সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও আসামি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তিনি ছাড়া পান। গত বছরের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেফতার করে। পরবর্তীকালে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হলো- ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকার, স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাকসেনারা বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজারের এক নং গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করেন।

পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেন।

১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত প্রায় ২টার দিকে এ আসামি, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাকসেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালান।

এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালান। এসময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করেন।

পরে ৪ নভেম্বর মধ্যরাতে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (দুপুর ২:১১)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com