শিল্প ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর ১ জানুয়ারি থেকে

অবশেষে ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়া হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকেই সব উৎপাদনশীল শিল্প খাতের মেয়াদি ও চলতি মূলধন নতুন ও পুরনো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করতে হবে। গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের জন্য বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, উৎপাদনশীল শিল্প খাতের এক অঙ্কের সুদহার আগামী ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সহায়ক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো: নাছের জানিয়েছেন, নতুন পুরাতন সবক্ষেত্রেই উৎপাদনীল শিল্প ঋণের সুদহার এক অঙ্কে অর্থাৎ ৯ শতাংশ কার্যকর করা হবে। পুরনো কেউ এ খাতে ১২ শতাংশে ঋণ নিলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সেই ঋণও ৯ শতাংশে চলে আসবে। তবে, ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ার পর কেউ যদি আবার ঋণখেলাপি হন, তাহলে ওই ক্ষেত্রে সুদহার আরো ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ঋণখেলাপির জন্য তখন ঋণের সুদহার হবে ১১ শতাংশ। তিনি বলেন, শুধু সিঙ্গেল ডিজিট নিয়েই সার্কুলার করা হবে না; এর সাথে সহায়ক আরো একগুচ্ছ সার্কুলার জারি করা হবে। সাশ্রয়ী তহবিল পেতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও কিছু নির্দেশনা থাকবে। যেমন, আগে বলা হয়েছিল সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যাংক ও ৫০ শতাংশ পাবে বেসরকারি ব্যাংক।

এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬ শতাংশে আমানত রাখতে বাধ্য করার জন্য সার্কুলার জারি করা হবে। বলা হবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ শতাংশ তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ নির্দেশনা পরিপালন করে সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং করবে। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আমানত পেয়ে যাবে সাশ্রয়ী হারে।

জানা গেছে, এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এক অঙ্কের সুদহার কার্যকরের পর সম্ভাব্য পরিস্থিতির দায় কেউ একা নিতে চাননি। যে কারণে এ বিষয়ে গতকাল জরুরি ভিত্তিতে পর্ষদ বৈঠক ডেকেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান, ব্যাংকিং সচিবসহ প্রায় সব পর্ষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর হলে ব্যাংকিং খাতে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রথমে পর্যালোচনা করা হয়। যেহেতু আগেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন এক জানুয়ারি থেকে এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করা হবে তাই এ হার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনা হয়েছে এক অঙ্কের সুদহার কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকিং খাত যে সমস্যায় পড়বে তার দায় যেন একক ভাবে না পড়ে সে জন্যই পর্ষদের অনুমোদন নেয়া হয়। পর্ষদ অনুমোদন দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রেই ভারমুক্ত হবে বলে ওই সূত্র মনে করে।

জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ দিন ধরে সমস্যা চলছে। বিশেষ করে অনেকটা আদিষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেয়ায় এ সমস্যা অনেকটা বড় আকারে দেখা দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে। যারা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তাদের বড় একটি অংশ এখন আর ঋণ পরিশোধ করছেন না। চলতি বছরের শুরুতেই ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়নের ঘোষণা দেয়ায় অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেছে। এ অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়নের কথা বলে ব্যাংক পরিচালকরাও কম সুবিধা পাননি। সাবেক অর্থমন্ত্রীর শেষ সময়ে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি বেশি কিছু সুবিধা নেয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (রাত ৪:১৭)
  • ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com