জনবান্ধব দূতাবাস গড়া এবং অর্থনৈতিক কূটনীতিকে জোরদার প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বাংলাদেশি নারী রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রবাসীদের জন্য ‘খোলা জানালা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
জর্দানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান রাষ্ট্রদূত নাহিদা।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে দূতাবাসকে জনবান্ধব করা। প্রবাসীদের সকল সহযোগিতা ও সহায়তা নিশ্চিত করা আমার লক্ষ্য।’
‘কনস্যুলার স্টাফরা কোনো দর্শনার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক বা অসহযোগিতামূলক আচরণ করছে কি না তা পর্যবেক্ষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দূতাবাসে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে,’ বলেন নাহিদা সোবহান।
তিনি বলেন, ‘আমি দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে জোরদার করতে চাই। আমাদের পণ্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির মাধ্যমে জর্ডানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নীত করা হবে আমার অন্যতম প্রধান কাজ।’
মুসিলম রাষ্ট্র জর্ডানেও বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সেখানেও সবার অভ্যর্থনা পাচ্ছেন বাংলাদেশের ১৫তম বিসিএসের মাধ্যমে ফরেন ক্যাডারের ক্যারিয়ার শুরু করা এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘মাত্র এক সপ্তাহ হলো আমি আম্মানে এসেছি। এর মধ্যে জর্ডানের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনিও একজন নারী এবং জেনেভাতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আামাকে দেখেই চিনতে পেরেছেন এবং আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
‘বাংলাদেশ একজন নারী রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে, এতে তারাও খুব খুশি। কারণ, তারা আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে জানেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বেশ সম্মানের চোখে দেখে জর্ডান সরকার’-যোগ করেন নাহিদা সোবহান।
তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয়, এখন পরর্যন্ত আমি এখানে যাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি, তারাই আমাকে পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি শুধু নই, জর্ডানে প্রায় ১২টি দেশের নারী রাষ্ট্রদূত রয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদা সোবহান বলেন, ‘জর্ডানে দেড় লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নারী ধরতে পারেন।’
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জর্ডানের শ্রম আইন খুব শক্ত। যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে তা সমাধানে এদের শ্রম মন্ত্রণালয় সবধরনের সহায়তা করে। আর তারা যখন কোনো ক্ষেত্রে নেগোসিয়েশন করে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রায় শ্রমিকদের পক্ষেই যায় বলে জানতে পেরেছি।’
মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে নারীকর্মী নির্যাতিত নিয়মিত খবর এলেও জর্ডানে নারীকর্মী নির্যাতন তুলনামূলক কম কম বলে মনে করেন জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, ‘এখানে এসব ঘটনা নিয়মিত নয়। আমি আসার পরে একজন নারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বেশ কিছু সমস্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছিলেন। এসব ক্ষেত্রে আমরা ওই মালিককে ডেকে জিজ্ঞাসা করি। কর্মীকে ক্ষতিপূরণ দিতে বললে অনেক মালিক দিয়ে দেয়। অনেকে আবার উল্টো কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।’
জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, কর্মীরা দক্ষ হয়ে বিদেশে এলে নির্যাতনের মাত্রা কমে আসবে।
নাহিদা সোবহান বলেন, ‘সংখ্যার চেয়ে কর্মীদের কোয়ালিটিতে নজর দিতে হবে। দক্ষ শ্রমিক বেশি পাঠাতে পারলে আমরা লাভবান হবো বেশ। দেশের অর্থনীতিতে এসব দক্ষ শ্রমিকরা অবদান রাখতে পারবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি কর্মীদের সুনামও বাড়বে।’
বিভিন্ন দেশে ফিলিপাইনের কর্মীদের সুনাম আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীদেরও এমন সুনামের জন্য দেশ থেকে আসার পূর্বে কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে হবে। যে ধরনের কাজ তারা বিদেশে এসে করবেন, সে কাজে দক্ষ হয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নাহিদা সোবহানকে আম্মান দূতাবাসে নিয়োগের কথা জানানোর পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি কর্মস্থলে যোগ দেন নাহিদা।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ছিলেন। নাহিদা সোবহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রোম, কলকাতা, জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। নাহিদা নেদারল্যান্ডের হেগ একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’ থেকে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।