পাপিয়ার কর্মকাণ্ড জানতে ওয়েস্টিনে দুদকের চিঠি

অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নুর পাপিয়া সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলে চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। সোমবার (২ মার্চ) বিকেলে তিনি ওই চিঠি পাঠান। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়া এ পর্যন্ত কতদিন অবস্থান করেছেনে এবং সেখানে কত টাকা বিল দিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাপিয়ার কাছে আসা ব্যক্তি ও হোটেলে অবস্থানকারীদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে ওই সময়ের ভিডিও রেকর্ডও চাওয়া হতে পারে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব বড় ভূমিকা রাখে। তাই হোটেলে তার ব্যয়ের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে।

পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে রোববার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। দুদক বলেছে, পাপিয়ার সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। পরের দিন সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখা, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানা ও শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা আলাদা তিনটি মামলার প্রত্যেকটিতে পাঁচ দিন করে প্রত্যেকের ১৫ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রতারণা, অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে শামীমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে যুব মহিলা লীগ।

পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছিল,সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকা সত্ত্বেও পাপিয়া ও তার স্বামী স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। ফার্মগেটে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও দুটি দুই কোটি টাকা দামের প্লট, বিলাসবহুল ৪টি গাড়ি এবং বিএফডিসির সামনে কার এক্সচেঞ্জ নামে একটি গাড়ির শো-রুম রয়েছে তাদের।

কার এক্সচেঞ্জ শোরুমে পাপিয়ার এক কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। নরসিংদী শহরে কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে ও বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন আসামিরা।

র‌্যাব জানায়, গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে এই দম্পতিকে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে তারা ৫৯ দিনে মোট ৮১ লাখ, ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। এর বাইরে হোটেলের বার এককভাবে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা বিল দিতেন।

র‌্যাব বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে টাকার উৎস সম্পর্কে কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

প্রাথমিক তথ্যমতে, পাপিয়া দম্পতি পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তবে টাকার বিনিময়ে কারও কোনো সংযোগ দিতে পারেননি তারা। তাছাড়া নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যা ৭:০০)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com