হ্যাজার্ড ফিরতেই দেখা মিলল দুর্দান্ত রিয়ালের

প্রথম ৩০-৩৫ মিনিট দেখে মনে হচ্ছিল, এডেন হ্যাজার্ড ফেরার পরও বুঝি রিয়াল মাদ্রিদের ছন্দে ফিরতে সময় লাগবে! তখনো খেলায় গতিতে-ছন্দে রিয়ালকে অচেনা লাগছিল। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল দখলের লড়াইয়ে তাড়নাও মনে হচ্ছিল কম!

এসব দেখেই কি না, ম্যাচ বদলে দেওয়ার দায়িত্বটা নিজের হাতেই নিয়ে নিয়েছেন হ্যাজার্ড। পায়ের চোট কাটিয়ে লিগে আজই প্রথম রিয়ালের জার্সিতে মাঠে নেমেছেন বেলজিয়ান প্লেমেকার। ৪০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তাঁর গোলার মতো শটেই এগিয়ে যায় রিয়াল। ছন্দেও ফেরে সেই গোলের পরই। সঙ্গে করিম বেনজেমার জোড়া গোল মিলিয়ে নিজেদের মাঠে আজ উয়েস্কার বিপক্ষে ম্যাচটাতে শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের অনায়াস জয়ই পেয়েছে জিনেদিন জিদানের দল।

জয়ের ব্যবধানের পাশাপাশি যে দিকটি জিদানকে বেশি তৃপ্ত করবে, সেটি হলো, হ্যাজার্ডের গোলের পর থেকে বাকিটা সময় রিয়াল খেলেছেও দারুণ! এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত যেটি খুব একটা দেখা যায়নি। আর রিয়াল ভক্তদের খুশি করবে এই তথ্যটি যে, রিয়ালের এই ছন্দে ফেরায় বড় অবদান হ্যাজার্ডেরই। চোটমুক্ত থাকতে পারলে ২৯ বছর বয়সী বেলজিয়ান কী করবেন, সেই কল্পনায় রিয়াল ভক্তমন খুশি হতেই পারে।

ম্যাচটা রিয়াল অধিনায়ক সের্হিও রামোসের জন্য ছিল বিশেষ—স্প্যানিশ লিগে এটি ছিল রামোসের ৫০০তম ম্যাচ। এর মধ্যে ৩৯টি তাঁর প্রথম ক্লাব সেভিয়ার হয়ে, বাকিগুলো রিয়ালের জার্সিতে। ম্যাচে একটি গোল পেলে উপলক্ষটা আরও দারুণই হতো রামোসের, রিয়ালের জার্সিতে ১০০ গোলের মাইলফলকও ছোঁয়া হয়ে যেত তাঁর। কিন্তু তা না হোক, দল যেভাবে ছন্দে ফিরেছে, অধিনায়ক হিসেবে তাতেই তৃপ্ত হওয়ার কথা রামোসেরও।

করোনার কারণে দেরিতে শুরু হওয়া মৌসুমে প্রতি তিন দিন পরপরই মাঠে নামতে হচ্ছে দলগুলোকে। কখনো লিগ, তো কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ। আগামী মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের মাঠে আন্তোনিও কন্তের ইন্টার মিলানকে স্বাগত জানাবে রিয়াল। সে কারণে এই ম্যাচের দলে জিদান অনেক অদলবদল করবেন, তা অনুমিতই ছিল।

রক্ষণে রাফায়েল ভারানকে খেলাননি জিদান। মাঝমাঠে বদল বলতে টনি ক্রুসকে একাদশে রাখেননি জিদান, কাসেমিরোকে ৭০ মিনিটের মতো খেলিয়ে তাঁর বদলেই ক্রুসকে নামিয়েছেন। ফেদেরিকো ভালভের্দেকে তুলে ইসকোকেও নামিয়েছেন ৬০ মিনিট পর। চোট কাটিয়ে ফেরা হ্যাজার্ডকেও তুলে নিয়েছেন ৬০ মিনিট পর। একই সঙ্গে তুলে নিয়েছেন মার্কো আসেনসিওকেও। রক্ষণে লেফটব্যাক ফারলাঁ মেন্দিকে প্রথমার্ধে খেলাননি, নামিয়েছেন ৫২ মিনিটে। স্প্যানিশ লিগে পাঁচ বদলি থাকায় বেশ সুবিধাই হলো জিদানের!

গোলপোস্টে কোর্তোয়া, রক্ষণে রামোসের সঙ্গে এদের মিলিতাও, রাইটব্যাকে লুকাস ভাসকেজ, লেফটব্যাকে মার্সেলো, মাঝমাঠে কাসেমিরোর সঙ্গে মদরিচ ও ভালভের্দে, আক্রমণে হ্যাজার্ডের সঙ্গে বেনজেমা ও আসেনসিও—এ-ই ছিল জিদানের একাদশ। কিন্তু ম্যাচের শুরুটা বেশ আলসে ভঙ্গিতেই হয়েছে রিয়ালের। হয়তো গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছিল। এ সময়টাতে উয়েস্কার তরুণ প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড রাফা মির বেশ ভুগিয়েছেন রিয়ালকে। কিন্তু ৪০ মিনিটে হ্যাজার্ডের গোলের পরই দৃশ্যপটে পুরোপুরি বদল।

চোট কাটিয়ে গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে মৌসুমে প্রথমবার মাঠে নেমেছেন হ্যাজার্ড। একাদশে নামা এই প্রথম। ৪০ মিনিটে তাঁর গোলটি বুঝিয়ে গেল, চোট মোটেও মরচে ধরাতে পারেনি হ্যাজার্ডের ঝলকে। রক্ষণ থেকে মিলিতাওয়ের পাস এল তাঁর দিকে। তারপর বলে এক, দুই, তিন স্পর্শ হ্যাজার্ডের। ফল? গোল!

মিলিতাওয়ের পাস ধরতে ধরতেই শরীরের মোচড়ে পেরিয়ে গেলেন এক উয়েস্কা খেলোয়াড়কে। তারপর বলে একটা স্পর্শে একটু জায়গা করে নিলেন, তখনো উয়েস্কার গোলপোস্ট থেকে ২৮ মিটার দূরে হ্যাজার্ড। কিন্তু সেখান থেকেই বাঁ পায়ের শট হ্যাজার্ডের। শট না বলে গোলা বলা ভালো! উয়েস্কা গোলকিপারের কিছুই করার ছিল না! ৩৯২ দিন পর রিয়ালের জার্সিতে গোল পেলেন হ্যাজার্ড। ২০১৯ সালের অক্টোবরে লিগে গ্রানাদার বিপক্ষে আগের গোলটি পেয়েছিলেন হ্যাজার্ড, সেটি ছিল রিয়ালের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোল। আজকের গোলটি রিয়ালে ২৪ ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয়!

বিরতিতে যাওয়ার আগে রিয়ালে আবার গোলের উচ্ছ্বাস! এবার বেনজেমার ঝলক। ডানদিক থেকে লুকাস ভাসকেজের ক্রস বুকে রিসিভ করতে করতেই ঘুরে গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেললেন ফরাসি স্ট্রাইকার, এরপর বাঁ পায়ের ভলিতে বল জালে।

দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাজার্ড মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত রিয়ালের সব আক্রমণের প্রাণ হয়েই ছিলেন। ওই সময়টাতে যেভাবে ‘ওয়ান-টাচ’ ফুটবল খেলছিল রিয়াল, গত মৌসুমে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সময়টার কথা মনে পড়ছিল হয়তো অনেকের। সে সময় চোটে পড়ার আগে হ্যাজার্ড দারুণ খেলছিলেন, রিয়ালও তখন মুগ্ধ করেছে ওয়ান-টাচ ফুটবলে।

আজ সেরকমই কিছুর দেখা মিলছিল। ৫৪ মিনিটে রিয়ালের তৃতীয় গোলটি এল সেই দারুণ ফুটবলের পুরস্কার হয়েই। মাঝমাঠ থেকে ওয়ান-টু খেলে হ্যাজার্ড-বেনজেমারা বল নিয়ে আসেন উয়েস্কা বক্সে। সেখান থেকে বেনজেমার ক্রস পায়ে নিয়ে দারুণ শটে গোল রিয়াল মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভের্দের।

এরপর হ্যাজার্ড উঠে গেলেও ইসকো দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন, গতির ঝলক দেখিয়েছেন ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোরা। রিয়ালের ফুটবলেও দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে তাই প্রাণ থাকল। মাঝে ৭৪ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গোল করেন উয়েস্কার দাভিদ ফেরেইরো, রাফা মিরও দুটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি রিয়ালের চিন্তার কারণ হতে পারেনি। ৯০ মিনিটে আবার বেনজেমা গোল করে দারুণ ম্যাচটিতে রিয়ালকে স্বস্তি এনে দেন। রিয়ালের হয়ে একাদশে ছিলেন—সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এমন সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে ১৩ গোলে অবদান বেনজেমার। গোল করেছেন ৯টি, করিয়েছেন ৪টি।

এ জয়ে ৭ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রিয়াল। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টায় আলাভেসের মাঠে নামতে যাওয়া বার্সেলোনার ৫ ম্যাচে পয়েন্ট ৭।

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৬:০১)
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com