জাকাতের নির্দেশ ও না দেয়ার শাস্তি

জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। জাকাত আদায় করা ফরজ। জাকাত না দেয়া কবিরা গোনাহ। জাকাত না দেয়ার মারাত্মক শাস্তির কথা এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তা ঘোষণা করেছেন-
আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সব ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮০)

জাকাত অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের। কাফের এবং মুসলিমের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারীও। জাকাত নেসাব পরিমাণ মালের মালিকের জাকাত ছেড়ে দেয়া কবিরা গোনাহ। জাকাত দেয়া মহান আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা কবিরা গোনাহ। কেননা জাকাতের বিধানদাতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেন-
‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর এবং জাকাত আদায় কর।’

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইয়ামেনে (শাসক হিসেবে) নিযুক্ত করেন। সে সময় তাকে এ মর্মে নসিহত করেন-
– ঈমানের দাওয়াত দেবে
সেখানের অধিবাসীদের এ মর্মে আহ্বান করবে- ‘আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসুল’।যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে-
– নামাজের আহ্বান করবে
আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে-
– জাকাত দেয়ার আহ্বান করবে
আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সাদকা (জাকাত) ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীর কাছ থেকে (জাকাত) আদায় করে; তাদের (সমাজের) দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়।

জাকাত আদায়ের পদক্ষেপ
ইসলামে জাকাত না দেয়া কবিরা গোনাহ আর তা অস্বীকার করা কুফরি। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জাকাত আদায়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের সুযোগে আবাস ও জুবইয়ান গোত্রদ্বয় জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ সভা হয়। সে সময়টিতে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে এ মর্মে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন-
‘আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় উটের যে বাচ্চাটি জাকাত হিসেবে দেয়া হতো, এখন যদি কেউ সেটিও দিতে অস্বীকার করে তাহলেও আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’

সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত যে, জাকাত না দেয়া মুমিন মুসলমানের অনেক বড় ক্ষতির কারণ এবং কবিরা গোনাহ।

জাকাত আদায়ের মাধ্যমে শুধু মালের পবিত্রতা অর্জনই নয়। জাকাত প্রদানের ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবিধ উপকার হয়। আর জাকাত আদায়ে রয়েছে আখেরাতে মুক্তির ঘোষণা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘আপনি আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন, তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন, তার বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যারা সম্পদের অধিকারী তাদের জাকাত দেয়া। নিজেকে ইসলামের বিধানের উপর অটল থাকা এবং স্বীকৃতি দেয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে জাকাত দেয়ার তাওফিক দান করুন। কবিরা গোনাহের ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। সব কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com