দাম বেশি পাওয়ায় আগেই তোলা হচ্ছে পেঁয়াজ

চর দুর্গাপুর। রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামটির দূরত্ব মাত্র ২৭ কিলোমিটার। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার জয়মনটপ ইউনিয়নের গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে সব মিলিয়ে ঘণ্টা দেড়েক। শাকসবজি উৎপাদনে দারুণ খ্যাতি রয়েছে চর দুর্গাপুরের। ভৌগোলিক গঠনে কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রাম। সে কারণে রবি শস্য বা শীতকালীন আগাম ফসল পাওয়া যায় এই গ্রাম থেকে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় খুব সহজেই চলে আসে চর দুর্গাপুরের টাটকা শাকসবজি, ফলমূল।

রাজধানী ঢাকার বাজারে এখন পেঁয়াজের বেশ কদর। শুধু ঢাকা কেন, সারা দেশেই পেঁয়াজের নাগাল সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হলে দেড় শ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর এই সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন চর দুর্গাপুরের কৃষকেরা। আশ্বিন মাসের প্রথম দিকেই এই চর দুর্গাপুর গ্রামের কৃষকেরা পেঁয়াজের আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। কলমিলতা শুরু করেছে। ঢাকার বাজারে তাদের পেঁয়াজ এরই মধ্যে চলে আসতে শুরু করেছে।

চর দুর্গাপুরের এমনই এক কৃষক জাহিদ মোল্লা। দিন দশেক আগে থেকে জাহিদ মোল্লার পেঁয়াজ ঢাকার বাজারে আসা শুরু করেছে। এ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমরা আশ্বিন মাসের প্রথম থাইক্যাই পিঁয়াজ আবাদ শুরু করছি। অহন লাগাইছি মুড়ি পিঁয়াজ। এই পিঁয়াজ দেখতে মুড়ির মতো। ছোট ছোট দানা হয়। কিন্তু ভীষণ ঝাঁঝ। ঢাকার থন ব্যাপারীরা আমাগো গ্রামে আইসা এই পিঁয়াজ কিনা লইয়া যাইতাছে। এইডা আবার গাছ সহ ( পেঁয়াজ ও কলি) কিনতে হয়।,

দাম কেমন পাচ্ছেন? প্রশ্ন করতে জাহিদ মোল্লা বলেন, ‘ দশ দিন আগের থন মুড়ি পিঁয়াজ বেচতাসি। দামের হেরফের নাই। আঠারোশো টাকা মণ। কেজি ৪৫ টাকা। ‘

আপনার ক্ষেতের পেঁয়াজ কোথায় পাওয়া যায়? এর জবাবে জাহিদ মোল্লা বলেন, ‘এইবার না পিঁয়াজের দারুণ চাহিদা। তাই একটু আগেভাগেই তুলছি। বেপারীর আইতাছে গাজীপুর, ঢাকার কাওরান বাজার থাইক্যা। ‘

শুধু সিংগাইরে নয়, পুরো মানিকগঞ্জ জেলা দেশি পেঁয়াজের জন্য বেশ বিখ্যাত। একথা জানান সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিংগাইর উপজেলা কিছুটা উঁচু এলাকায় অবস্থিত। এজন্য শীত কিংবা গ্রীষ্মকালীন ফসল আগেভাগে চাষ হয়। এবার পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। তাই এই উপজেলায় আগেভাগে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। সব মিলিয়ে সিংগাইর উপজেলায় এ মৌসুমে ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হবে। আগের বছর হয়েছিল ৭০ হেক্টর জমিতে। এবার দাম বেশি পাওয়ায় অনেক কৃষক এক মৌসুমে দুইবার পেঁয়াজ আবাদ করবেন। সেই প্রস্তুতি অনেকেই নিয়ে রেখেছেন।

কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতানের কথা সূত্র ধরে আবারো যোগাযোগ করা হয় চর দুর্গাপুরের জাহিদ মোল্লার সঙ্গে। জাহিদ মোল্লা বলেন, ‘ মুড়ি পেঁয়াজ শেষ হলে পৌষ মাসের প্রথমে হালি পেঁয়াজ আবাদ শুরু করমু। মাঘ মাসের শেষেই খালি পেঁয়াজ বেচতে পারমু। ‘

জাহিদ মোল্লার জমিতে চাষ হওয়া মুড়ি পিঁয়াজের দেখা মিলল ঢাকার কাওরান বাজারে কাঁচা সবজির আড়ত চাঁদপুর বাণিজ্যালয়ে। ট্রাকে ভর্তি করে সন্ধ্যা না হতেই পেঁয়াজকলি এই আড়তে চলে আসে। এখানে কলিসহ পিঁয়াজের এক আঁটি গড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এক কিংবা দুই আঁটি নয়, পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। চাঁদপুর বাণিজ্যালয়ের মালিক আব্দুর রশিদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, আড়তে ৮ দিন আগে থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এইবার চাহিদা বেশি। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। পেঁয়াজকলি আরও সপ্তাহ দুয়েক এভাবেই আসবে। এরপর পুরোপুরি পেঁয়াজ আসতে থাকবে। তবে দাম সপ্তাহখানেকের মধ্যে খুব একটা কমে যাওবার সম্ভাবনা নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পিঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, একই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন।

সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী দেশে এবার পেঁয়াজের মোট সরবরাহ হয়েছে ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। সেই হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন। এতে দাম কম থাকারই কথা, যদিও তা হয়নি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com