ইরানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। রবিবার রাজধানী তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, সরকার পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার জনগণের রয়েছে। কিন্তু এই অধিকার প্রয়োগের নামে কাউকে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না।
হাসান রুহানি বলেন, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর কিছু মানুষকে রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে তা সবার পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কাজেই ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদের নামে নাশকতা সহ্য করা হবে না।
পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সম্পূর্ণ আইন মেনেই নিয়েছে। আমরা সরকারের তিন বিভাগের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১৫ নভেম্বর ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারি রেশনে দেওয়া পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। লিটার প্রতি রেশনের পেট্রোলের দাম ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার রিয়াল করার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য মাসিক বরাদ্দ হিসেবে তেলের পরিমাণ ৬০ লিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর বাইরে বাড়তি পেট্রোলের প্রয়োজন পড়লে লিটার প্রতি দাম পড়বে ৩০ হাজার রিয়াল। সরকারের ওই ঘোষণার পরই দেশজুড়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে। শনিবারও রাজধানী তেহরানসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। সে সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধরা। সিরজান শহরে পুলিশের গাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছে। এদিন অন্তত ৪০টি শহরের রাস্তায় নামে বিক্ষুব্ধরা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে তাদেরকে ‘দাঙ্গাবাজ’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পর তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোলরেজা রাহমানি ফাজলি দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তিনি হুঁশিয়ার করেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করলে শান্তি ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন ভবনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ফুটেজও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ব্যাংকে অগ্নিসংযোগের ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করছে আন্দোলনকারীরা। সে সময় ইরানের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। শনিবারের বিক্ষোভে এমন সহিংসতার পরই রবিবার বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ইরানি প্রেসিডেন্ট।