মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশালের ভাষা সৈনিক, যুদ্ধাহত ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদ পরিবারের একাধিক সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নগরীর ফকিরবাড়ি রোডে বাসদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জেলা বাসদ সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী। তার বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তী এবং ঠাকুরমা (দাদি) উষা রানীর নাম রয়েছে রাজাকারের তালিকায়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বিতর্কিত রাজাকার তালিকা প্রত্যাহারসহ তালিকা প্রণয়নকারীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা বাসদ। সকালে বাসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীর মেয়ে ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, দাদা সুধীর কুমার চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তিনি গেজেটভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তার স্ত্রী উষা রানী চক্রবর্তীর নামও রাজাকার তালিকায় এসেছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক।
এসময় অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এত বড় অপমান কেন করা হলো তিনি বুঝতে পারছেন না। এই অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন। তিনি বাকরুদ্ধ, বিস্মিত, হতাশ এবং একই সাথে ক্ষুব্ধ। কেন এই তালিকা প্রণয়ন করা হলো তা খতিয়ে দেখার আহবান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ফকির বাড়ি কার্যালয় চত্বর থেকে জেলা বাসদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা বাসদ আহবায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অনেকেই বক্তব্য রাখেন। তারা তালিকা প্রত্যাহারসহ যাচাই-বাছাই করে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকার কপিতে অগ্নিসংযোগ করেন তারা।
এ তালিকায় বিশিষ্ট সাংবাদিক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিহির লাল দত্ত এবং তার বাবা জিতেন্দ্র লাল দত্তের নামও এসেছে রাজাকারের তালিকায়। মিহির লাল দত্তের ছেলে শুভ ব্রত দত্ত জানান, তার বাবার নাম এসেছে রাজাকারের তালিকার ৯৪ নম্বরে। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর- ২৮৯, তারিখ- ২১/০৫/২০০৫ এবং মুক্তিবার্তা নম্বর- ০৬০১০১১০৬০। ৯নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, তার বাবা একজন ভাষা সৈনিক এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার ও গীতিকার ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি পেটে গুলিবিদ্ধ হন। তার পরিবারে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা, এরমধ্যে দু’জন শহীদ হন। রাজাকারের তালিকায় নাম আসায় তারা ব্যথিত এবং বিস্মিত হয়েছেন।
এছাড়া ১৫ আগস্টে শহীদ বরিশালের আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাই আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর ক্যান্টনমেন্টে বন্দী বরিশালের জগদ্দীশ চন্দ্র মুখার্জীর নামও এসেছে প্রকাশিত তালিকায়। আরও অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। রাজাকারের তালিকায় ভাষা সৈনিক, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের স্ত্রীর নাম থাকার বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, এই তালকা জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো হয়নি। তালিকায় ভুল হলে সংশোধনের সুযোগও রয়েছে।