বগুড়ার স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বগুড়ার স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদান এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে। সেশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।

তিনি জানান, চলতি বছরের মাঝামাঝি তার দাখিল করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গত ১৭ ডিসেম্বর এক আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ফির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমনকি ইতোপূর্বে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন,উচ্চ আদালতের ওই আদেশের বিষয়ে সচেতন করতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর শহরের সাতমাথায় অভিভাবক সমাবেশ করা হবে। পরদিন বগুড়া জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। তবে তারপরও যদি কোন স্কুলে সেশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ না হয় তাহলে অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সেশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ এবং ইতোপূর্বে আদায় করা অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে চলতি বছরের মাঝামাঝি উচ্চ আদালতে করা রিটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান, বগুড়ার জেলা প্রশাসক, শিক্ষা অফিসার এবং শহরের ৬টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বিবাদী করা হয়।

বগুড়ার সেই ৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো- এসওএস হারম্যান মেইনর স্কুল ও কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টিএমএসএস স্কুল ও কলেজ এবং বগুড়া সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

রিটে অভিযোগ করা হয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। তাতে জেলা সদরে স্কুলগুলোতে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি ২ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু উল্লেখিত স্কুলগুলো সেই নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুই থেকে ৭ গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে।

রিট শুনানি শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ২ জুলাই এক আদেশে বিষয়টি তদন্ত করে ২ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বগুড়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদায় করা অতিরিক্ত ফি কেন ফেরত দেওয়া হবে না তার কারণও ৪ সপ্তাহের দর্শাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মান্নান বলেন, আদালতে দাখিল করা বগুড়া জেলা প্রশাসকের তদন্ত রিপোর্টেও অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ওই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে আদালত গত ১৭ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, আদালতের রায়ের কপি বগুড়ার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আসতে বিলম্ব হওয়ার সুযোগ নিয়ে স্কুলগুলো আগের মতই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ফন্দি এঁটেছে। তাই প্রথমে অভিভাবকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তারপরও যদি স্কুলগুলো অতিরিক্ত ফি নেওয়া বন্ধ না করে তাহলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, আমি ৬টি স্কুলের বিরুদ্ধে রিট করলেও আদালতের আদেশে কোন স্কুলই অতিরিক্ত ফি আদায় করতে পারবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই অন্য স্কুলগুলোও যদি বাড়তি অর্থ আদায় করে তা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com