মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে সোলাইমানির মরদেহ ইরানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইরানের আহভাজ শহরে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান ও শোক মিছিলে অংশ নিয়ে লাখো মানুষ যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান দেয়।
সোলাইমানিকে হত্যাকাণ্ডের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে মোড় নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইরান এরই মধ্যে চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল শনিবারই ইরানের পবিত্র মসজিদের চূড়ায় যুদ্ধের লাল ঝাণ্ডা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শনিবার ইরানের কম প্রদেশের পবিত্র মসজিদ জামকারান’র সর্ব্বোচ্চ গম্বুজে রক্তলাল পতাকা টাঙায় ইরান। সে ঘটনার আগেই অবশ্য ইরাকের বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ও সালাহউদ্দিন প্রদেশে মার্কিন সেনাদের বালাদ বিমান ঘাঁটিতে রকেট হামলার ঘটনা ঘটে। আজ রবিবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি মার্কিন সম্পদ ও নাগরিকদের ওপর আঘাত হানে, তাহলে ‘দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে’ ইরানের ওপর হামলা চালানো হবে। হামলার জন্য ৫২টি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাখার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প সরাসরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো হুমকি চায় না।
ট্রাম্প আরো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেহরান মার্কিন স্থাপনায় আঘাত হানলে জবাবে দ্রুত ৫২টি ইরানি স্থাপনায় হামলা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে ৫২টি স্থাপনা লক্ষ্য করেছে, তা ইরানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ট্রাম্পের নির্দেশে বিমান হামলা চালিয়ে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। ইরাক-ইরান থেকে শুরু করে বিক্ষোভ চলছে খোদ মার্কিন মুলুকেও।জানা গেছে, নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। শিকাগোতেও বিক্ষোভ হয়েছে। ফিলাডেলফিয়াতেও পাঁচ শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি শিকাগোতে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনেই জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন শান্তিপ্রিয় মানুষজন।
তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাত মনে করে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনাটি কূটনৈতিক নীতি এবং নিয়মাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। এর জেরে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান টেলিফোনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি কেবল ইরাকের সাম্প্রতিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন। অথচ, শুক্রবার মার্কিন বিমান হামলায় সোলাইমানি মারা যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো কথা হওয়ার বিষয়টি জানা যায়নি।
ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তো রয়েছেই। তবে যুদ্ধ বেঁধে গেলে কে কোন পক্ষে যাবে, তা নিয়েও তালগোল লেগে আছে।