গুপ্তচরবৃত্তির যেসব ঘটনা আলোড়ন তুলেছে জার্মানিতে

রাশিয়ার গোয়েন্দাদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গত বুধবার জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্য টোমাস এইচ.-কে গ্রেপ্তার করা হয়। চরম ডানপন্থি এএফডি দলের প্রতি তার সহানুভূতির কথা আগে থেকেই জানতেন তার সহকর্মীরা।

এই দলের একটি অংশ আবার ইউক্রেনকে ন্যাটোর সহায়তার বিষয়ে কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

এর আগে ২০২২ সালের শেষদিকে টোমাস এইচ-এর মতোই আরেকটি ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল। জার্মানির বিদেশবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডির একটি ইউনিটের প্রধান কার্স্টেন এল.-কে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির হয়ে ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে সেগুলো কোথায় বসানো হয়েছে সে তথ্য জানতে আগ্রহী ছিল এফএসবি। তবে কার্স্টেন এল. এর এমন তথ্য জানার সুযোগ ছিল কিনা তা নিশ্চিত নয়। বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে এখন তার বিচার চলছে।

মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আনশ্লাগ
১৯৮০-এর দশকে রাশিয়ার দু’জন এজেন্ট আন্দ্রেয়াস ও হাইড্রুন আনশ্লাগ নাম নিয়ে জার্মানিতে মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করেন। এর মধ্যে স্বামী প্রকৌশলী ও স্ত্রী গৃহিনীর পরিচয় ধারণ করে ছিলেন। তারা প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে রাশিয়ার কাছে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে তথ্য পাঠান।

এনক্রিপ্টেড রেডিও মেসেজের মাধ্যমে তারা নির্দেশনা পেতেন। ২০১১ সালে তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যায়। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তাদের ধরতে সহায়তা করে। ২০১৩ সালে তাদের কয়েক বছরের জেল দেওয়া হয়। পরে তাদের রাশিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গাব্রিয়েল গাস্ট
পূর্ব জার্মানির গোয়ন্দা সংস্থা স্টাসি পশ্চিম জার্মানিতে সম্ভবত ১২ হাজার এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছিল। এদের একজন গাব্রিয়েল গাস্ট। পশ্চিম জার্মানির বাসিন্দা গাস্ট পূর্ব জার্মানিতে গবেষণা করতে গেলে ১৯৬৮ সালে তাকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন স্টাসির এক কর্মকর্তা।

সেই থেকে তিনি পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়ে এসেছেন। একইসঙ্গে তিনি ভুয়া নাম নিয়ে পশ্চিম জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডিতেও কাজ করেন। ১৯৮৯ সালে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের কিছুদিন আগে তিনি ধরা পড়েছিলেন।

হাইনৎস ফেলফে
বিএনডির ‘কাউন্টারইন্টেলিজেন্স সোভিয়েত ইউনিয়ন’ ইউনিটের প্রধান হিসেবে অনেকদিন কাজ করেছেন ফেলফে। তিনিও একজন ডাবল এজেন্ট ছিলেন। তিনি হিটলারের পুলিশ বাহিনী এসএস-এরও সদস্য ছিলেন। তিনি কেজিবি, ব্রিটিশ এমআইসিক্স ছাড়াও আরও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন বলে ধারণা করা হয়।

গ্যুন্টার গিওম
শীতল যুদ্ধ চলার সময় জার্মানির সবচেয়ে আলোচিত গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা ছিল সম্ভবত গ্যুন্টার গিওমের মামলা। পূর্ব জার্মানির শরণার্থীর বেশ ধরে ১৯৫৬ সালে পশ্চিম জার্মানিতে গিয়েছিলেন তিনি ও তার স্ত্রী ক্রিস্টেল। তার দায়িত্ব ছিল এসপিডি দলের ভেতরের খবর স্টাসিকে দেওয়া।

একপর্যায়ে এসপিডি ক্ষমতায় গেলে গিওম চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্টের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এরপর গিওমের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে গেলে ১৯৭৪ সালের ৬ মে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ব্রান্ট। গিওমকে ১৩ বছরের ও তার স্ত্রীকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৮১ সালে এজেন্ট বিনিময়ের আওতায় তারা ছাড়া পেয়েছিলেন।

এলি বারকসাটিস ও কার্ল লাওরেনৎস
বার্লিন প্রাচীর পতনের পর স্টাসির অনেক গোয়েন্দার খবর জানা যায়। তবে পূর্ব জার্মানিতে কাজ করা পশ্চিম জার্মানির এজেন্টদের কথা খুব বেশি জানা যায়নি। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম বারকসাটিস ও লাওরেনৎস।

১৯৫০ এর দশকে পূর্ব জার্মানির প্রধানমন্ত্রী অটো গ্রোটেভলের চিফ সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেন বারকসাটিস। সেই সময় তিনি সরকারের কিছু নথি তার ভালোবাসার মানুষ লাওরেনৎসকে দিয়েছিলেন। লাওরেনৎস সেসব নথি পশ্চিম জার্মানির কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন।

ধরা পড়ার পর বারকসাটিস ও লাওরেনৎসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৫ সালে গিলোটিনে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সকাল ১১:২৯)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com