সাইবার নিরাপত্তা আইনে ‌‌‘হয়রানি’ হতে পারে মানুষ

সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একদল অধিকারকর্মী। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধন আনার দাবি জানান তারা।

রোববার (১৩ আগস্ট) ১২ জন মুক্ত গণমাধ্যম ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী সই করা এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ৭ আগস্ট বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ৯ আগস্ট আইনটির খসড়া প্রকাশ করে নাগরিকদের মতামত চাওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করার সিদ্ধান্ত এবং নাগরিকদের মতামত প্রদানের সুযোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। তবে অধিকারকর্মীরা এও বলেছেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করে, আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক ও দেশীয় মানবাধিকারের ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য না রেখে, সাইবার অপরাধ, নিরাপত্তা ও পরিসরের বিষয় পরিষ্কার না করে, প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দায়িত্বে বিচারিক পর্যবেক্ষণের আওতায় না এনে তড়িঘড়ি করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনটি অনুমোদন করা দুঃখজনক। এ ছাড়া এটি নাগরিকবান্ধব আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় অপরাধ নির্ণয় হবে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় এবং শাস্তি হবে প্রস্তাবিত আইনে, যা প্রস্তাবিত আইনটির উদ্দেশ্য নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। শাস্তি প্রদানের এই তারতম্য সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া আরও কিছু ধারা জামিনযোগ্য করার সুযোগ রয়েছে।

অধিকারকর্মীরা মনে করেন, প্রস্তাবিত আইনের  ৮, ৯, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩২ ধারাগুলো সংবিধান, মৌলিক মানবাধিকারের নীতি এবং আইনের শাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া আইনের ৪২ ধারাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারার সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য না থাকায়, তা হয়রানিমূলক এবং নিবর্তনমূলক হয়ে ওঠার সুযোগ রয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের নীতিমালাগুলোকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

অধিকারকর্মীরা বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন, সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতকরণকল্পে প্রণীত আইন’ উত্থাপন করে আইনটি বাতিল করা। শিরোনামে সাইবার নিরাপত্তার আইনের পরিবর্তে সাইবার সুরক্ষা আইন করা। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মৌলিক অধিকার চর্চা করার কারণে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেসব মামলা বাতিল করে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া। এ জন্য নাগরিক বান্ধব বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের আহম্মদ উল্লাহ, ভয়েসের আহমেদ স্বপন মাহমুদ, সাউথ এশিয়ান মিডিয়া সলিডারিটি নেটওয়ার্কের খায়রুজ্জামান কামাল, গণমাধ্যম অধিকারকর্মী মাইনুল ইসলাম খান, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন, গ্লোবাল ভয়েসেসের রেজওয়ান ইসলাম, আইনজীবী মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, এফইএক্সবির সালিম সামাদ, মানবাধিকারকর্মী সাঈদ আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী শারমিন খান, উন্নয়নকর্মী শামীম আরা শিউলী এবং পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সৈয়দা আইরিন জামান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (দুপুর ১২:১২)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com