বন্যার্তদের সহায়তা করা মুসলিমের দায়িত্ব

মোহাম্মাদ হাসিব উল্লাহ

পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে। বন্যা তার মধ্যে অন্যতম। তীব্র বৃষ্টির কারণে প্রায়ই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার ফলে মানুষের সাধারণ জীবন দুর্বিষহ হয়। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার মানুষেরা পানিবন্দি হয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে। বিশেষ করে পাহাড়ি ও নিচু অঞ্চলের মানুষেরা বন্যায় আক্রান্ত হয়। এসময় অসংখ্য বানভাসি মানুষ খাদ্য-চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাবে দুর্ভোগে দিন পার করে। এসব ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
’مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ فَإِنَّ اللَّهَ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ‘
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে। আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তার বিপদ দূর করে দেবেন। (আবু দাউদ: ৪৮৯৩)

শুধু তা-ই নয়, অন্যের বিপদাপদে পাশে দাঁড়ালে আল্লাহও খুশি হন। এটি সওয়াবের কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
’وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ‘-
অর্থাৎ যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে; ততক্ষণ আল্লাহ্ তার কল্যাণে রত থাকবেন। (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব: ৬৯)

এমনকি বন্যার পানিতে আবদ্ধ হয়ে অনেকে অনাহারে দিন কাটান। দরিদ্ররা অর্থের অভাবে ঠিকমত খাবার কিনতে ও খেতে পারেন না। এক্ষেত্রে সামর্থবানদের কর্তব্য হচ্ছে, অভুক্তদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করা। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যেমন উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে, অনুরূপ সমস্যায় পতিত মানুষদের জন্যও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। আর আল্লাহকে ভালোবেসে এসব কাজ করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
’وَیُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّه مِسۡکِیۡنًا وَّیَتِیۡمًا وَّاَسِیۡرًا‘-
অর্থাৎ আর তারা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দিকে খাবার খাওয়ান। (সুরা আল-ইনসান: ৮)

এসময় বন্যা কবলিত এলাকায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা অবশ্য কর্তব্য। এর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
’أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ وَفُكُّوا الْعَانِيَ‘-
অর্থাৎ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা করো এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার করো। (সহিহ বুখারি: ৫৬৪৯)

বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি ডুবে গিয়ে অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন, যারা অনাথ ও স্বামীহারা তথা বিধবা। অর্থাভাবে ঘর মেরামত কিংবা পুনরায় নির্মাণের সামর্থ রাখে না। বন্যা পরবর্তী তাদের জন্য উত্তম বাসস্থানের ব্যবস্থা করা মানবিক দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
’أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا، وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى‏‘-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি এতিম ও অনাথের লালনপালন করে, সে আমার সাথে পাশাপাশি জান্নাতে থাকবে। একথা বলে তিনি তর্জনি ও মধ্যমা আঙুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন। (সহিহ বুখারি: ৬০০৫)

তাই সমাজের ধনী ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের এমন মানবিক কাজে সহায়তার উদ্দেশে এগিয়ে আসা উচিত। যার মধ্যে নিহিত আছে রবের সন্তুষ্টি। এ বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
’لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ‘-
অর্থাৎ আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না। (সহিহ বুখারি: ৭৩৭৬)

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (রাত ৮:৪৮)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com