বড় ম্যাচে বিবর্ণ হালান্ড

সেভিয়ার সঙ্গে ম্যাচে জয় দিয়ে ইউরোপ সেরার চক্রপূরণ করেছেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটিকে নিয়ে এটি তার ১৫তম শিরোপা। সাফল্যের দিক থেকে নিজের সেরা সময় সম্ভবত সিটিজেন্স শিবিরেই পার করছেন এই স্প্যানিশ কোচ। তবে উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালের পরেও হয়ত নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না পেপ। আর এর বড় কারণ তার দলের সুপারস্টার আর্লিং হালান্ড। 

গত মৌসুমেই স্বপ্নের মত সময় পার করেছেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার হালান্ড। প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ড গড়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও নিয়মিত গোলের দেখা পেয়েছেন তিনি। তবে, প্রসঙ্গটা যখন ফাইনালের, তখন আর্লিং হালান্ড যেন একটু বেশিই বিবর্ণ। মৌসুমের প্রায় সব বড় ম্যাচেই গোলখরায় ভুগেছেন তিনি।

বড় ম্যাচে ব্যর্থ হল্যান্ড

গতকালের সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু করা যাক। পুরো ম্যাচ খেলেছেন নাম্বার নাইন পজিশনে। ৯০ মিনিটে বল পায়ে পেয়েছেন মাত্র ১৫ বার। তারচেয়ে কম বল টাচ নেই আর কারোরই। এমনকি ৮ পাসের মাঝেও ভুল পাস। গোলমুখে শট নেই একটিও। সেভিয়ার রক্ষণভাগ যেন বোতলবন্দী করে রেখেছিল এই নাম্বার নাইনকে। গতকাল হালান্ডকে গার্দিওলা খেলিয়েছেন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড পজিশনে। কোল পালমার, জ্যাক গ্রিলিশ আর ফিল ফোডেন থেকে বারবার পাস এসেছে। তবে বাধার প্রাচীর হয়ে ছিলেন সেভিয়ার দুই ডিফেন্ডার গুলেদি এবং লইস বেড। হল্যান্ডের নিচে নেমে খেলার প্রবণতা কম থাকায় দুই ডিফেন্ডারই সহজে মার্ক করেছেন তাকে। প্রত্যেকেই করেছেন ৭টি করে ক্লিয়ারেন্স। আর বলের যোগান না পাওয়ায় হল্যান্ডও ছিলেন নিষ্প্রভ। প্রায় একইরকম চিত্র দেখা গিয়েছে আর্সেনালের বিপক্ষে। একক স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন সেই ম্যাচেও। তাতেই দুই গানার ডিফেন্ডার সালিবা এবং গ্যাব্রিয়েলের পকেটবন্দী হয়ে যান ২৩ বছরের এই স্ট্রাইকার। ম্যাচটা শেষও করা হয়নি হল্যান্ডের। ৬৪ মিনিটেই তাকে বদলি করানো হয়। তার বদলি নামা কোল পালমারই শেষ পর্যন্ত সিটির হয়ে স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছিলেন।

শুধু এই দুই ফাইনালই না। এর আগে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষেও নিষ্প্রভ ছিলেন হল্যান্ড। তার আগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যানসিটি দাপুটে ফুটবল খেললেও হল্যান্ডকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

হালান্ডের খেলার ধরণই কি ব্যর্থতার কারণ? 

কিন্তু বড় ম্যাচেই কেন এমন ব্যর্থতা হালান্ডের। এর উত্তর লুকিয়ে আছে তার খেলার ধরণে। সাধারণত ডিবক্সের আশেপাশেই বেশি থাকতে পছন্দ করেন হালান্ড। প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে তার হিটম্যাপ দেখলেই তা স্পষ্ট হয়।

ছবিতে দেখানো ম্যাপ অনুযায়ী কিক-অফের সময় মাঝমাঠ ব্যতীত খুব কম সময়েই নিচে নেমে গেম বিল্ডআপে সাহায্য করেছেন হালান্ড। দলের মিডফিল্ডে ডি ব্রুইনা, ইকাই গুন্দোয়ান, বার্নাদো সিলভার মত দক্ষ বল প্লেয়িং মিডফিল্ডার থাকায় তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি তার। সেইসঙ্গে দুই পাশ থেকে সাহায্য করেছেন রিয়াদ মাহরেজ, ফিল ফোডেন কিংবা জ্যাক গ্রিলিশরা। যার সুবাদে প্রচুর বল যোগান পেয়েছেন ডিবক্সে। গোলও এসেছে সহজে।

নিচের ছবিতে বেগুনি রঙের সব শটেই গোল পেয়েছেন হালান্ড। আর ক্রস চিহ্নিত শট থেকে গোল আসেনি তার। মূলত ডিবক্সের বাইরে থেকে গত মৌসুমে গোলের জন্য তেমন কোনো প্রচেষ্টাই চালাতে হয়নি হালান্ডকে।

নরওয়ের এই তরুণের বল প্রবণতার সূত্র ধরেই নিজেদের রক্ষণ সাজিয়েছিল ইন্টার মিলান, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা রিয়াল মাদ্রিদ। কড়া ম্যান মার্কিং এর সুবাদে সবকটি ম্যাচেই বোতলবন্দী হয়ে ছিলেন তিনি। যদিও হালান্ডকে এককভাবে নজরে রাখতে গিয়ে অনেকটাই খেই হারিয়েছে প্রতিপক্ষের রক্ষণ। গোল পেতে তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি কাউকে।

ম্যান মার্কিং কি তবে হালান্ডের  দুর্বলতা? 

ফুটবলে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিপক্ষকে আটকাতে ম্যান মার্কিং বেশ পুরাতন এক অস্ত্র। লিওনেল মেসির বিরুদ্ধে প্রায় সব ম্যাচেই একজন করে ম্যান মার্কিং এর ব্যবস্থা রেখেছিলেন কোচ হোসে মরিনিয়ো। যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অন্তত মেসিকে বেশ কয়েক ম্যাচে গোল বঞ্চিত করতে পেরেছিলেন। যদিও মেসির নিজস্ব খেলার ধরণের কারণে এমন কৌশলকে পুরোপুরি সফল বলা চলে না।

হালান্ড অবশ্য মেসির মত মাঠের পুরোটা জুড়ে খেলেন না, যা তার হিটম্যাপ থেকেই স্পষ্ট। আর তাই অনেক সময় হল্যান্ডকে ঠেকাতে ম্যান মার্কিংই উপযুক্ত ব্যবস্থা। যদিও এই পদ্ধতিতে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে প্রতিপক্ষ। বার্নাদো সিলভা, ডি ব্রুইনা কিংবা ফোডেনের মত গোল করতে সক্ষম কোন খেলোয়াড় সেই সুবিধা নিতে পারেন অনায়াসেই।

প্রিমিয়ার লিগের মত লিগে তাই হালান্ডকে ম্যান মার্কিং করার দিকে খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয় না। এর পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলো জোনাল মার্ক এর দিকেই বেশি নির্ভর করেন। আর এখানেই মূলত সুবিধা পেয়ে থাকেন হল্যান্ড। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির এই ফুটবলার প্রায়ই তার গতি এবং উচ্চতার কারণে ফাঁকা স্থান আদায় করে নিতে সক্ষম। যার কারণে বক্সে পৌঁছানো পাসকে গোলে পরিণত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে।

মৌসুম শুরুর আগে ম্যানসিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলার ভাষ্য ছিল, নতুন মৌসুমে আরও বেশি ক্ষুরধার হয়েই হাজির হবেন হল্যান্ড। মৌসুমের প্রথম লিগ ম্যাচে জোড়া গোল করে সেই কথার প্রমাণও দিয়েছেন এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। তবে শিরোপা নির্ধারণী দুই ম্যাচেই হালান্ড আটকেছেন ম্যান মার্কিং এর ফাঁদে।

গার্দিওলা এর আগে মেসি এবং লেভানডস্কিকে নিয়ে এমন খেলার বিরুদ্ধে সফল হয়েছিলেন। এবার হালান্ডকে নিয়ে কতখানি সফল হন, সেটাই দেখবার অপেক্ষা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (বিকাল ৪:০৫)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com