বিড়ালের মালিকানা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, বিচার গেল আইজিপির কাছে

অসুস্থ অবস্থায় একটি বিড়াল ছানাকে পাঁচ মাস আগে কোলে তুলে নিয়েছিলেন রিজিয়া বেগম নামে এক গৃহিণী। নিজের দুই মেয়ের মতোই বিড়াল ছানাটিকে যত্ন করে বড় করেন তিনি। নাম রাখেন ‘লিওন’। ধীরে ধীরে মায়া যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি বাড়তে থাকে লিওনের চঞ্চলতা, দুষ্টুমি। রিজিয়া বেগমের মনের ভাষাও যেন বুঝতে শিখে যায় লিওন।

খাবার খেতে টেবিলে বা সোফায় বসা, নিজে নিজে বাথরুমে যাওয়া, ঘুম থেকে জাগার সময়, নামাজের সময় কর্তাকে ডেকে তোলার কাজও করে লিওন। ডাকলে মিউ মিউ শব্দে দ্রুত সাড়া দেওয়া লিওন বেশ জনপ্রিয় পুরো ভবনের বাসিন্দাদের কাছে।

আকস্মিকভাবে একদিন লিওনের মালিকানার দাবি তোলেন ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কনস্টেবল মো. অনিক। রিজিয়া বেগম যে ভবনে থাকেন ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন কনস্টেবল অনিক।

লিওনের পালিতা ভুক্তভোগী নারী রিজিয়া বেগম বলছেন, ‘এই বিল্ডিংয়ে একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল অনিকের দাবি আমাকে খুবই হতবিহ্বল করেছে। তার মালিকানা দাবিতে আমি তাজ্জব। তার এ দাবি আমার একটি মেয়েকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টারই নামান্তর।’

এ নিয়ে অনেক বচসা-ঝগড়া হয়েছে। রিজিয়ার পরিবারের দাবি, লিওনকে না দিলে ক্ষতি করা হবে এবং বড় ধরনের বিপদ ঘটানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে কনস্টেবল অনিক ও তার পরিবার।শেষ পর্যন্ত এ বিবাদ তাদের দুই পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় কর্মরত কনস্টেবল মো. অনিকের ক্ষমতার অপব্যবহার, বিড়াল লিওনকে বল প্রয়োগ করে নিয়ে যেতে চাওয়া ও নানা হুমকির প্রতিকার চেয়ে গত ১৩ আগস্ট জেলা পুলিশ কার্যালয়, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে লিখিত অভিযোগ করেছেন রিজিয়া বেগম। তিন দপ্তরে করা লিখিত অভিযোগের কপি সংগ্রহ করেছে ঢাকা পোস্ট।অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল অনিকের দাবি, তেমন কিছু এখানে ঘটেনি। সামান্য বিষয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে ওই নারীর কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি অনেক বড় করা হয়েছে। হুমকির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকি তিনি বিড়াল ফেরত চাওয়া বা মালিকানাও দাবি করেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগকারী ভুক্তভোগী রিজিয়া বেগম দুই সন্তান ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী স্বামীসহ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া এলাকার একটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দা।

লিখিত অভিযোগের কপি সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীর বসবাস করা একই ভবনের একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. অনিক।

গত ৫ মাস আগে অনিকের শাশুড়ি তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে ২০/২১ দিন বয়স্ক একটি বিড়াল ছানা ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন। ৪/৫ দিন বিড়াল ছানাটি রাখার পর অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বমি ও পায়খানা করায় বিড়ালটিকে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার জন্য কনস্টেবল অনিকের শাশুড়ি নিজে ভবনের নিচে যেতে চাইলে রিজিয়া বেগম চেয়ে নেন। ওই নারীও দাবি ছাড়াই বিড়াল ছানাটি হস্তান্তর করেন রিজিয়ার কাছে।

রিজিয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার বাসায় অন্য আরেকটি বিড়াল পোষা ছিল, যেটি কয়েকদিন আগে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই আরেকটি বিড়াল ছানা দেখে সেটি নিতে আগ্রহী হন তিনি।

বিড়াল ছানাটিকে রাস্তায় না ফেলে দাবিহীনভাবে পালক হিসেবে বাসায় আনেন। বিড়াল ছানাটি লালনপালন করতে থাকেন এবং নাম রাখেন লিওন। লিওনকে নিয়ে তিনি মাঝে-মধ্যে ধোলাইপাড় পশু হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসা করান। বিড়ালের বাচ্চাটিকে নিজের সন্তানের মতো আদর-যত্নে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন।

রিজিয়া উল্লেখ করেন, চার পাঁচ মাস অতিবাহিত হলে হঠাৎ আমার বিড়াল লিওনকে পুলিশ কনস্টেবল মো. অনিকের স্ত্রী তাদের দিয়ে দিতে বলেন। আমি বিড়ালটি দিতে না চাইলে পুলিশ কনস্টেবল অনিক গ্রাম থেকে তার শাশুড়ি ও তিন শালিকাকে নিয়ে আসেন বিড়াল নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য। এরই মধ্যে তার শাশুড়ি ও শালিকারা গ্রাম থেকে এসেই আমার কাছে বিড়াল চাযন এবং নানাভাবে বিভিন্ন সময় ঝগড়া-বিবাদ করেন। পুলিশ কনস্টেবল অনিক আমাকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখান। আমি বিড়ালটি তাদের না দিলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন। আমাকে কয়েকদিন সময় দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগকারী নারী রিজিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কনস্টেবল অনিককে আমি বিড়ালটি না দিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারপরও হুমকি দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘আপনার কত বড় সাহস পুলিশের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম করেন, বিড়াল না দিলে আপনার বড় ধরনের বিপদ ঘটাইয়া দিমু।’

রিজিয়া বেগম বলেন, আমার লিওনকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। সারাদিন ব্যবসার কাজে স্বামী বাসায় থাকেন না। দুই মেয়ে আমার। ওদের নিয়ে আমি বাসায় থাকি। লিওন আমার তৃতীয় মেয়ের মতো। তাকে অনেক যত্নে ও ভালোবাসায় আমি বড় করছি। একদিন রাস্তায় বিড়াল ছানা হিসেবে ফেলতে যাওয়া মানুষগুলোই লিওনকে দাবি করছে। কনস্টেবল অনিক পুলিশি ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। আমি কোনোভাবেই লিওনকে ওদের হাতে তুলে দেবো না। সেজন্য প্রাথমিকভাবে পুলিশের তিন দপ্তরে অভিযোগ করছি। এতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ সুরক্ষা না মিললে আদালতে মামলা করব।

দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্জামান জানান, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ কেউ করেননি।

তবে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল অনিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিড়াল ছানাটি আমাদেরই। এমন না আমি বিড়াল খুব পছন্দ করি। উনি পালার কথা বলে বিড়ালটি মাঝে গ্রামে পাঠিয়েছিলেন। সেটি জেনেই আমার স্ত্রী কথা বলতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমিই পরে বলেছি বিড়াল ফেরত দিতে হবে না। কিন্তু বিষয়টি অনেক বড় করা হয়েছে। হুমকির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই ভবনে আরও অনেকেই থাকেন। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে, তদন্তে যদি আমি দোষী হই, শাস্তি মাথা পেতে নেব।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সকাল ১১:৫৯)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com