জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত আয়েশার

বাবাকে হারিয়েছে আগেই। বিধবা মা এতোদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। মায়ের স্বপ্ন তার মেয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার হবে, দেশের জন্য কাজ করবে। মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করেছে মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা। তারপরও কপালে চিন্তার ভাঁজ মা রুমি আক্তারের। অর্থের অভাবে মেধাবী এই ছাত্রী এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও কলেজে ভর্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। 

আয়েশা নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের গোবড়ার ডাঙ্গা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। সে পঞ্চপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করে।মেধাবী শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলে, টাকার অভাবে আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারবো না? আমার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আজ অবধি প্রাইভেট-কোচিং কাকে বলে জানি না। ওপরের ক্লাসের আপা-ভাইয়াদের বই, আর হাতে লেখা নোট ছিল আমার একমাত্র ভরসা। বাবার মুত্যুর পর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এছাড়া সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তি টাকা পেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্ত উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে।আয়েশা ঢাকা পোস্টকে বলে,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদান না পেলে কিংবা কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এ আমার উচ্চ শিক্ষা লাভের ইচ্ছা একবারেই চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে।

আয়েশা সিদ্দিকার মা রুমি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর পর আমার তিন কন্যা সন্তানের ভরণ-পোষণ কীভাবে চালাবো কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। আমাদের তো বাড়ির ভিটাও নেই। অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সন্তাদের লেখাপড়ার খরচ ও একমুঠো ভাত মুখে তুলে দিতে প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে যাচ্ছি। গরিবের কথা আল্লাহ কবে শুনবে জানি না।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে মেট্রিক পাস করলো। আর দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণি ও তৃতীয় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। আমার বড় মেয়ে আয়েশার পড়াশোনা জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করছি।

পঞ্চপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়েশা সত্যিই একজন মেধাবী ছাত্রী। তার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। এখন তার লেখাপড়ায় কেউ সহযোগিতা না করলে, হয়তো তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে। তাই এমন মেধাবীদের লালন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াহেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়েশার বাবা গত তিন বছর আগে মারা গেছেন। তার বাবার অবর্তমানে আমরা স্থানীয়ভাবে তাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে এসএসসি পর্যন্ত এগিয়ে নিয়েছি। কিন্তু মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য দেশবাসীর কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বিধবা মা। তার মায়ের পাশাপাশি আমিও এই মেধাবী ছাত্রীর জন্য লেখাপড়ার খরচ চালাতে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাই। কেউ তার পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৭২২-৮০৩০৯৬ এই নম্বরে যোগাযোগ বা অর্থ সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সকাল ১১:১৯)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com