চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গায় টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় ফাইরা জেরিন নামে ছয় মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
ফাইরা জেরিন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুনের মেয়ে।
শিশুটির বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা শহরে ‘বিগ বাজার’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য অলোক কুমার ঘোষের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তিনি সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি কষ্ট করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে টাকা দিই। এরপর থেকে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তিনি চাকরিও দেননি আবার টাকা ফেরতও দেননি। টাকা চাইলে উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ছয় মাস পর আমার মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর তার হার্টে ছিদ্র দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য আমি অলোক কুমার ঘোষের নিকট টাকা চাইলেও টাকা দেয়নি। আত্মীয়-স্বজনরা কিছুটা সহযোগিতা করলেও অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল মেয়ের চিকিৎসার জন্য। টাকার অভাবে মেয়েকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। অলোককে বারবার জানালেও তিনি টাকা দেননি। আজ সকালে মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর মেয়ে আমার দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অলোক কুমার ঘোষ মেহেরপুর জেলায় এপিবিএনের নায়েব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অলোক ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করবেন- এমন আশ্বাসে ছয় বছরের এক সন্তানের মাকে তার স্বামীকে তালাক দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা গুলশানপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে ৯ মাস তারা বসবাস করেন। ওই নারী বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং তা মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এরপরই ২০২১ সালের মে মাসে ওই নারী দামুড়হুদা মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
অভিযুক্ত আলোক কুমার ঘোষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সাংসারিক কাজের জন্য ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেইনি। আমার নিকট প্রমাণ আছে। আগামী ২৭ আগস্ট টাকা ফেরত দিয়ে দেব।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কান্দিলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৩ এ কর্মরত থাকাকালীন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় অলোক কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করি। ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। প্রথমে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি মুসলিম মেয়কে বিয়ে করেন। নাম পাল্টে সবুজ নাম রাখা হয়। তদন্তে বিভিন্নজনের নিকট থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানতে পারি। কখনো জজের বডিগার্ড, কখনো পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, কখনো এসপি পরিচয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমনকি আমাদের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি আর কখনো চাকরি ফিরে পাবেন না।