সরানো হলো রোগীর স্বজন পেটানো সেই ওসিকে

সরানো হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজন পেটানো সেই ওসি নাজিম উদ্দিনকে। তাকে নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় বদলি করা হয়েছে। 

রোববার (২০ আগস্ট) নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ সই করা এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার স্পিনা রানী প্রামাণিক।

চমেক হাসপাতালে রোগীর স্বজন পিটিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসি নাজিমের মারমুখী আচরণের বেশ সমালোচনাও হয়েছিল।

এরপর রোগীর এক স্বজনকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে নিজ থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ আড়াই মাসের বেশি থানায় অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। এসময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। তবে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দিনই কাকতালীয়ভাবে তিনি সুস্থ হয়ে থানায় যোগ দেন। সবশেষ তার বিরুদ্ধে ওঠে মারধর, হত্যাচেষ্টা, চাঁদা দাবি ও ফ্ল্যাট দখলে সহযোগিতার।

এ ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট তিনিসহ মোট তিন জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে দায়ের করা মামলাটি আমলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

এদিকে, নানা সময়ে আলোচনা-সমালোচনা চললেও ওসি নাজিম ছিলেন বহাল তবিয়তে। অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবশেষে রোববার (২০ আগস্ট) তাকে বদলি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কয়েক দিন ধরে চলা ওই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। ওইদিন পাঁচলাইশ থানার ওসি রোগীর স্বজনদের পিটিয়ে আলোচনায় আসেন। এদিন মোস্তাকিম নামে এক রোগীর ছেলেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান ওসি নাজিম।

এদিকে, কারাগার থেকে বের হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে মোস্তাকিম ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন এবং একই থানার এসআই আবদুল আজিজকে আসামি করা হয়। আদালত অভিযোগকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর ওইদিনই একসঙ্গে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ছুটি নেন অভিযুক্ত ওসি-এসআই। প্রায় ৮০ দিন মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি। যেদিন  প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় সেদিনই আকস্মিক দুজনই সুস্থ হয়ে থানায় যোগ দেন।

গত ১৭ আগস্ট শামীমা ওয়াহেদ নামে এক ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা করা হয়, ভুক্তভোগী পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার জাংগাল পাড়া রিজিয়া ম্যানসন নামে একটি ভবনে থাকেন। মামলার বিবাদী আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী তার স্বামীর প্রথম সংসারের সন্তান। ভুক্তভোগী যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সেটি দখল করতে ফয়সাল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন। গত ২৭ জুলাই ভুক্তভোগীদের ডেকে নিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেয় ওসি নাজিম। না হয় ভুক্তভোগীদের কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনার পর ১২ ও ১৬ আগস্ট দুই দফা অভিযুক্তরা ওসি নাজিমের নির্দেশে ভুক্তভোগীর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাদের মারধর ও হত্যাচেষ্টা এবং ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) তিন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত মামলার অভিযোগ শুনে আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সকাল ১১:৪৩)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com