অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছি রেলস্টেশন থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত ৩.০৪ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসিব এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে কাজের চুক্তি বাতিলের পর এবার প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে প্রকল্প পরিচালক। রোববার (২০ আগস্ট) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল ঠিকাদারের চুক্তি বাতিলের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (ওজওউচ-৩) পরিচালককে পত্র প্রদান করেন এলজিইডি রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৪ টাকা চুক্তিমূল্যে বেলগাছি রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলগেট থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ২৫ এমএম ঘন কার্পেটিং দ্বারা সড়কের উন্নয়ন কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসিব এন্টারপ্রাইজ। পরে হাসিব এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেয় রাজবাড়ী সদরের সাবেক যুবলীগ নেতা ঠিকাদার হরিপদ সরকার রানা।
টেন্ডার অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বরে কাজ শুরু করে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। হরিপদ সরকার রানা চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজতো শেষ করেইনি বরং রাস্তাটিতে ব্যবহার করে অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। এতে আপত্তি জানায় সদর উপজেলা প্রকৌশলী। এসব বিষয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট সহ, জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় রাস্তাটির দুর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুর থেকে একটি টিম এসে কাজের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছি রেলস্টেশন সংলগ্ন থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ২৫ এম এম ঘন কার্পেটিং দ্বারা সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। টেন্ডারে কাজ পায় পাংশা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসিব এন্টারপ্রাইজ। ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজটি ২৮ নভেম্বর শুরু করে ২০২২ সালের ৮ জুন সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু কাজটি অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাস্তাটিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। ঠিকাদারকে এসব নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সাইট থেকে অপসারণ করতে বলা হয়। কিন্তু ঠিকাদার বিষয়টি আমলে না নিয়ে খারাপ মালামাল দিয়ে কাজ করতে থাকেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ফের পত্র প্রেরণ করা হয়।
ঠিকাদারি চুক্তি অনুযায়ী ২৮ দিনের অধিক সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের ত্রুটি সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত ৪ এপ্রিল ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিলের জন্য প্রকল্প পরিচালককে পত্র দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে। সর্বশেষ গত জুন মাসে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শিবরাজ চৌধুরীসহ গঠিত কমিটির যৌথ পরিমাপ শেষে সড়কটির অসমাপ্ত কাজের পরিমাণ ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার ২১৩ টাকা বিধি মোতাবেক ১০% হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২১ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ২৭/৭/২০২৩ তারিখে ঠিকাদার উক্ত জরিমানার টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমানে এ প্রকল্পে অবশিষ্ট কাজের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।